ফ্রিল্যান্সিং ব্যাসিক গাইডলাইন দ্বিতীয় পর্ব

আজকের পর্বে সবাইকে জানাই স্বাগতম। আজ কোন প্রকার বকবক না করে চলে যাব মূল প্রসঙ্গে। আপনি যদি পর্যাপ্ত সময় দিয়ে পরিশ্রম করতে পারেন। তাহলে আপনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন। আর ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য দরকার প্রচুর পরিমাণ ধৈর্য প্রয়োজন। যা আমাদের একদম নেই বললেই চলে।

১ম পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুন
freelancing basic guideline
freelancing basic guideline
আমরা সব সময় চাই আজকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে কাল থেকে মোটা অঙ্কের অ্যামাউন্ট ইনকাম করতে। বাট এটা কখনোই সম্ভব না। ছোট একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরও সুন্দরভাবে ক্লিয়ার করা যাক। মনে করেন আপনি ১২ থেকে ১৬ বছর পড়াশোনা করার পরে অনেক কষ্ট করে একটি চাকরি জোগাড় করেন তাও আবার ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেতনের।

আর আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পার মাসে ইনকাম করবো সেজন্য কি আপনাকে মটেও কষ্ট করতে হবেনা। অবশ্যই হবে। আর কষ্ট থেকেও বেশি পরিমাণ ধৈর্য ধরতে হবে। ওকে চলুন মূল প্রসঙ্গে যাওয়া যাক।

কিভাবে শুরু করবেন?
হ্যাঁ এটা আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অনেকের ফ্রিল্যান্সিং করার খুব ইচ্ছে থাকলেও কিভাবে শুরু করবেন? এটা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। আর এই সিদ্ধান্তহীনতায় এক সময়ে ফ্রিল্যান্সিং করার ইচ্ছেটাই শেষ করে দেয়।

আবার অনেকে মনে করেন ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। কিন্তু বিষয়টা মোটেও সেরকম নয়। আপনি যে সাবজেক্টে পড়াশোনা করেন না কেন শুধু ইংরেজিটা ভালো ভাবে জানলেই চলবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ফ্রীল্যান্সিং নিয়ে স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে যারা অনলাইন ভিত্তিক প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকেন। বর্তমান সময়ে অনলাইন ভিত্তিক প্রশিক্ষণ খুবই উপকারী। এতে নির্দিষ্ট কোন স্থানে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়।

এমনকি সরকার থেকেও ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে অনেক স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আপনি চাইলে যেকোন জায়গা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে পারেন। এবং শুরু করতে পারেন আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার।

কাজ কোথায় পাবেন?
ফ্রিল্যান্সিং শেখার আগেই আমাদের সবার মনে একটি প্রশ্ন জাগে। ফ্রিল্যান্সিং শিখে কোথায় কাজ পাবো? আপনি যদি আপনার কাজে দক্ষ হন তাহলে আপনি মার্কেটপ্লেসে আবেদন করার সাথে সাথেই আপনার অ্যাকাউন্ট অ্যাপ্রুভ হয়ে যাবে।

মার্কেটপ্লেস কি? মার্কেটপ্লেস হচ্ছে এমন একটি জায়গা যেখানে বিভিন্ন ধরনের ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ পাওয়া যায়।অর্থাৎ বায়ার এবং ফ্রিল্যান্সারের মধ্যকার তৃতীয় পক্ষ। তবে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আপনার কিন্তু অবশ্যই দক্ষ হতে হবে। কারণ মার্কেটপ্লেসের সমস্ত কাজ ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ের। তাই মার্কেটপ্লেসে নিজেকে দক্ষ প্রমাণ করেই টিকে থাকতে হবে।

আপনি যদি আপনার কাজে দক্ষ হন, রিভিউ ভাল থাকে তাহলে বিড করার সাথে সাথেই আপনি কাজটি পেয়ে যাবেন। তাই সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য, ভালো কাজ পাওয়ার জন্য, বেশি দাম পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে আপনার কাজে দক্ষ হতে হবে।

কত সময় লাগতে পারে?
ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে নতুনদের মাঝে আর একটি প্রশ্নের উদ্ভব হতে দেখা যায়। ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য কত সময় লাগতে পারে?

আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনের মত সহজ কাজ দিয়ে শুরু করতে চান তাহলে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে সব টুলগুলো শিখে নিতে। দুই তিন মাস পরে আপনি মার্কেটপ্লেস একাউন্ট খোলার মত অবস্থা চলে যাবেন। তবে সহজ কাজ দিয়ে শুরু করলে কাজ পেতে অনেকটা দেরি হবে। কারণ সহজ কাজের ক্ষেত্রে কম্পিটিটর অনেক বেশি। আর সহজ কাজ গুলোর ক্ষেত্রে কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে কাজ নিতে হয়।

তবে আপনি চাইলে প্রোগ্রামিং রিলেটেড কোন কিছু দিয়ে শুরু করতে পারেন। যদিও শিখতে কিছুটা সময় বেশি লাগবে শুরুর দিকে অনেক বেগ পেতে হবে। তবে একবার সফলতা আসলে ঘন্টায় ১০ থেকে ১০০ ডলার কোন ব্যাপারই না।

তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য কোনো শর্টকাট নেই। আপনার যদি ধারণা থাকে আপনি ২-৩ মাসের মধ্যেই হাজার হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন তবে সে ধারণা একদমই ভুল। তাই সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে অবশ্যই আপনাকে সময় দিয়ে কাজ শিখতে হবে।

ইনকাম কিরকম?
যারা ফ্রীল্যান্সিং জগতে নতুন তারা হরহামেশাই এই প্রশ্নটিই করে থাকেন, ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা ইনকাম করা যাবে? ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত কোন পেশায়ই ইনকামের কোন লিমিট থাকে না। এখানে আপনি যেরকম কাজ করবেন সেরকম ইনকাম করতে পারবেন।

আমার জানা মতে একজন ফ্রিল্যান্সারের ঘন্টায় ১০ থেকে ১০০ ডলার কোন ব্যাপারই না। আপনি যদি দৈনিক ২০ ডলার ইনকাম করেন তাও মাস শেষে ৬০০ ডলার ইনকাম হবে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫০ হাজার টাকার সমান।

এখানে ইনকাম টা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করে। একটু হার্ডওয়ার্ক করলে ভালো একটা অ্যামাউন্ট ইনকাম করা অনেক সহজ। অনেক ফ্রিল্যান্সার শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং করে নিজের ভাগ্যকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু ভাগ্য পরিবর্তন নয় তাদের বর্তমান অবস্থার কথা কল্পনাও করা যায় না।

কিভাবে পেমেন্ট নেবেন?
আপনি যদি ফ্রীল্যান্সিং জগতে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে এই প্রশ্নটা আপনার মনের জাগা একদম স্বাভাবিক। আপনার উপার্জিত টাকা আপনি বিভিন্ন ভাবে নিতে পারেন। Payoneer, Skrill, Xoom ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয় পেমেন্ট নেওয়ার মাধ্যম। এছাড়াও ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে পেমেন্ট নেওয়া যায়।

মার্কেটপ্লেসের সাথে পরিচয়
বর্তমানে ইন্টারনেটের ছড়াছড়ির কারণে অনেক মার্কেটপ্লেস তৈরি হয়েছে। আজকের পোস্টে আমরা খুবই জনপ্রিয় পাঁচটি মার্কেটপ্লেস নিয়ে আলোচনা করব।

আপওয়ার্ক
আপওয়ার্ক এমন একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেখানে সারা পৃথিবীর প্রায় ১ কোটি ফ্রিল্যান্সার কাজ করছে। এই মার্কেটপ্লেসে প্রায় সকল প্রকার কাজের সুযোগ আছে। আপওয়ার্কে রয়েছে লক্ষ লক্ষ কাজ। আপওয়ার্কে কাজ ভিত্তিক বা ঘন্টা ভিত্তিক উভয় প্রকারের কাজ পাওয়া যায়।

আপওয়ার্ক এর আগের নাম ছিল ওডেস্ক। ওডেস্ক ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ওডেস্ক এর নাম পরিবর্তন করে আপওয়ার্ক করা হয়। আপওয়ার্ক থেকে পেনিয়ার মাস্টার কার্ড, মানিবুকার্স সহ অন্যান্য মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা যায়।

ফাইবার
এখানে ফ্রিল্যান্সাররা গিগ তৈরি করে এবং বায়াররা কিনে নেয়। গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভয়েস রেকর্ড, আর্টিকেল রাইটিং ইত্যাদি কাজের জন্য জন্য ফাইভার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মার্কেটপ্লেস।

অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে তুলনায় এখানে কাজ করা কিছুটা সহজ। ফাইবার থেকে আয় করা অর্থ উত্তোলনের জন্য পেপাল, পেওনিয়ার এবং ব্যাংক ট্র্যান্সফার পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সার
বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি মার্কেটপ্লেস হচ্ছে ফ্রিল্যান্সার ডটকম। অনেক বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সাররা এই মার্কেটপ্লেসের সফলতার সহিত কাজ করছেন। ২০০৯ সালে এই জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসটি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে প্রতিষ্ঠিত হয়।

বায়াররা এখানে কাজ পোস্ট করে এবং ফ্রিল্যান্সাররা বিড করার মাধ্যমে কাজ পেয়ে থাকে। এখানে যেমন প্রচুর পরিমাণ কাজ রয়েছে তেমনি রয়েছে অনেক ফ্রিল্যান্সার। এখান থেকে আয় কৃত অর্থ উত্তোলনের জন্য পেপাল, পেওনিয়ার অথবা ব্যাংক ট্র্যান্সফার পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।

পিপল পার আওয়ার
পিপল পার আওয়ার হল যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। এখানে ফাইবার এর মত সার্ভিস সেল করার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার এর মত জব বিড করেও কাজ পাওয়া যায়। এ মার্কেটপ্লেসে প্রায় সব ধরনের কাজ পাওয়া যায়।

এখানে কাজ ভিত্তিক বা ঘন্টা ভিত্তিক উভয় ধরনের কাজ করে আয় করা যায়। পেপাল পাওয়ার থেকে আয় করা টাকা উত্তোলনের জন্য পেপাল, স্ক্রিল, পেওনিয়ার সহ ব্যাংক ট্র্যান্সফার পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।

নাইনটি নাইন ডিজাইন
নাইনটি নাইন ডিজাইন মূলত গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি মার্কেটপ্লেস। এখানে বায়াররা বিভিন্ন কন্টেস্টের আয়োজন করে এবং ফ্রিল্যান্সাররা সেই কন্টেস্টে অংশগ্রহণ করে তাদের ডিজাইন জমা দেয়। আর বায়াররা তাদের পছন্দ অনুযায়ী একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করে। এবং পেমেন্ট করে।

এখানে সফলতা অর্জন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই ক্রিয়েটিভ হতে হবে। কারণ বায়াররা সব সময় নতুন কিছু পছন্দ করে।

আজ এ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আর আলোচিত বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন।

The post ফ্রিল্যান্সিং ব্যাসিক গাইডলাইন দ্বিতীয় পর্ব appeared first on Trickbd.com.



from Trickbd.com https://ift.tt/3mjmhrR
via IFTTT

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট