Hello what’s up guys কেমন আছেন সবাই ? আশা করি ভালো আছেন । সবাইকে স্বাগতম আজকের একটি নতুন পোস্টে । টাইটেল আর thumbnail দেখে already বুঝে গেছেন আজকের টপিক কি । তাই বেশি কথা না বলে আজকের পোষ্ট শুরু করা যাক
কী আসে যায়
ইরতিজা আলম জয়ীতা
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ
Linguistic Secretary, Alate
রাত ২.২৬।
কিছু জটপাকানো চিন্তা নিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি আমি। জানালার বাইরে রাতের
শহর, আধঘুমন্ত শহরটা দেখতে কেমন মায়া লাগে। নিয়নের আলো জ্বেলে শহরটাকে
পাহারা দিচ্ছে পিচঢালা কালো রাস্তাগুলো- স্রোতহীন নদীর মতো। কখনো কখনো নদীর
বুকে ঢেউয়ের দোলার মতো দু’একটা গাড়ি ছুটে যাচ্ছে রাতের নীরবতায় ফাটল ধরিয়ে।
লোকে আমাকে কবি বলে। দু’কলম লিখতে জানলেই কবি হওয়া যায় না। কবি হতে
হলে প্রাচীন কিছু গল্প জানতে হয়। যেমন- আমার বাসার পাশের এই আমগাছটার বয়স
কতো? তার পাতায় পাতায় কোন রূপকথা লেখা আছে? কিংবা সিলিংফ্যানের আড়ালে
লুকনো টিকটিকিটা ঠিক কেন এভাবে চুপ হয়ে বসে আছে?
যাকগে, এরকম কিছু উদ্ভট চিন্তা আমার মাথায় প্রায়ই আসে, গুটিশুটি মেরে প্রভুভক্ত
কুকুরের মতো বসে থাকে মাথার ভেতরে। এগুলোকে আমি আর পাত্তা দিই না এখন,
ব্যস্ততার অজুহাতে তাড়িয়ে দিই বারবার। আমার দৃষ্টি জানালা ছাড়িয়ে আকাশ ছোঁয়।
কালো আকাশটাকে এত গুমোট মনে হয় কখনো কখনো! এই যেন বুকের উপর ভার
হয়ে চেপে বসবে। আর বুকের ভেতর একটা পাথর বয়ে বেড়ানোর তীব্রতা আমি ছাড়া
কেই বা ভালো বুঝে? আধখানা একটা মরা চাঁদ ঝুলে আছে তারাহীন আকাশে। কেমন
ফ্যাকাশে একটা আলো। বারান্দার হলদে আলো চাঁদের আলোর সাথে মিশে একাকার
হয়ে গেছে। আচ্ছা আমাদের জীবনও কি ঠিক এই মরা চাঁদটার মতো না? মৃত একটা
আত্মা নিয়ে শরীর বাঁচিয়ে রাখার সাধারণ একটা চেষ্টা না শুধু? জীবনের মানে কী অনেক
ব্যাপক? অনেক বিস্তৃত? অনেক গভীর কোনো মানে আছে না-কি এই জীবনের?
আমাকে লোকে কবি কেন বলে? কবিদের তো কাজ সবকিছুর মধ্য থেকে শুভ্রতা
টেনে আনা। কই আমি তো তা পারি না? এই যেমন, এই মরা চাঁদ দেখে আমার ভিতরে
কোনো আক্ষেপ জাগছে না। কই আমি তো ভরা পূর্ণিমা দেখে গৃহত্যাগী হতে চাইনি
কখনো? আমার কাছে ক্ষুধা আর কবিতা এক পাল্লায় মাপার মতো যন্ত্র নেই। আমি
পথকে নদী ভাবতে পারি ঠিকই, কিন্তু সেই নদীতে ভেসে কোনো এক উজানের দিকে
নৌকা বাইতে পারি না। খালি পায়ে পথ হেঁটে হিমু হওয়ার শখ জাগলেও স্যান্ডেলের
মায়া ছাড়তে পারি না। আসলে মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় সন্তানদের কবি হলে ঠিক চলে
না।
আমার সবটুকু কাব্যপ্রতিভা তাই বাংলা অ্যাসাইনমেন্টের অফসেট পেপারে। আমার
রচনা করা মানবিক উপাখ্যানগুলো সেমিস্টার শেষে উঁইপোকায় কাটে কোনো এক বদ্ধ
স্টোররুমে। আমার মনে পড়ে যেদিন কবিতার খাতাটা বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছিলো, আর
আমি তখন ব্যস্ত ছিলাম কোনো এক ত্রিকোণমিতির সমীকরণ মেলাতে। যখন দেখতে
পেলাম খাতাটা, ততক্ষণে ভিজে একসা হওয়া খাতাটা থেকে আমার কবিতাগুলি মুক্তি
পেয়ে গেছে। কালো কালি পানিতে মিশে গেছে। “অজস্র রাতের তারা- আলো নিভিয়ে
দাও, অন্ধকারে হোক আমার বসতি; আর গোধূলির আলো থাকুক তোমার- সোনালি
আলোয় রাঙা তোমারে আমি দু’চোখ মেলে শুধু দেখি”— এসব বাক্যের জন্য শোক করার
চেয়ে ত্রিকোণমিতির সমীকরণটাই বেশি জরুরি মনে হয়েছিলো। তবে হ্যাঁ, দু’এক
ন্যানো সেকেন্ডের জন্য হাত কেপেছিলো ঠিকই। বিংশ শতাব্দীতে শোকের বয়স হয়তো
ন্যানো সেকেন্ডেরও কম।
কাব্যপ্রতিভা আমার কাজে লাগেনি কখনোই। বাংলা সৃজনশীলে গত্বাঁধা আটটি নাম্বারই
ছিলো আমার কাব্যের রিপোর্টকার্ড। প্যাস্কেলের সূত্র মেলাতে মেলাতে আমার ধীরগতির
জীবনের একমাত্র বলটা কখন যেনো বিপরীত বলে একদম মিলিয়ে গেলো— বুঝতেই
পারিনি। মাঝেমধ্যে মনে হতো ঠিকই, কী লাভ জৈব যৌগ পড়ে, যেখানে জীবনের
যোগটুকুই মিলানোর ক্ষমতা আমার নেই? আমার জোরালো গলার বক্তব্যগুলো একে
একে মারা যেতে লাগলো চিৎকার করে ভূগোলের সীমা পরিসীমা মুখস্থ করতে গিয়ে
মধ্যরাতে নিঃশব্দ কিছু চিৎকার ঘরের দেওয়ালগুলোয় বাঁধা পেয়ে ফিরে আসতে লাগলো
আমার কাছেই। যত জোরে বের হতো সেসব চিৎকার, ফিরে আসতো তার চেয়ে আরো
অনেক বেশি তীব্রতা নিয়ে। আমি ভাবতাম, জাগতিক পদার্থের সূত্রগুলো
• মানবিক নিয়মে খাটে না? কবিতা নিয়ে যে তীব্র প্রেম ছিলো আমার, কিংবা অপ্রেম,
বলি না কেন- শীতের ঝরে যাওয়া পাতাগুলোর মতো কোনো এক রাতে তা ঝরে গেছেনিঃশব্দে । এক ঋতু আফসোস আর এক বারান্দা হাঁটুজলে ভিজে আমি মৃত প্রেমের শোক
করেছি বড়জোর এক সপ্তাহ। এরপর আর মনে পড়েনি তাকে। তবে ব্যস্ত দিনগুলোয়,
লাইব্রেরিতে বইয়ের মাঝে, দিনের ব্যস্ততম চায়ের চুমুকে কিংবা বৃষ্টিবিলাসের অমিয়
মুহূর্তগুলোতে— কাউকে বা কোনো কিছুকে যদি মনে পড়ে থাকে তবে তা আমার এই
প্রথম প্রেম। কবিতাকে ভালোবেসে আমি ব্যর্থ প্রেমিকার মতো কবিতার হাড়গোড় নিয়ে
বেঁচে আছি। কবিতায় পেট ভরে না- এ মহাসত্য বোঝার পর থেকে আমি ছেড়েছি
কবিতাকে- কিংবা কবিতাই আর থাকতে চায়নি আমার সাথে। এ কারণেই কবিতার
কথা বড় মনে পড়লেও, আমি কবিতা লিখি না। লিখতে পারি না। আমার মাথার
ভেতরে চলতে থাকা ঘোরগাড়ির ছন্দে ছন্দ মিলিয়ে দুইটা শব্দ লিখার ক্ষমতাও আমার
এখন আর নেই ।
রাত ২.৪৯
কলেজের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার শেষদিন কালকে। চারটা সাজেক্টের
অ্যাসাইনমেন্ট কম্পলিট হয়নি এখনো। শেষ করতে হবে আজকে রাতের মধ্যেই।
আচ্ছা, এক্সামের ডেট দিয়েছে কী? রুটিনটাও একবার চেক করা দরকার। এতো এতো
কাজের ভিড়ে এখন রাত্রিবিলাস করার কোন মানে হয় না। এই রে, চা এর কাপে সর
পড়ে গেছে, চুমুক দেওয়ার কথা মনেই ছিলো না। এক চুমুকে সবটা চা শেষ করলাম।
আমার চিনি বেশি দেওয়া চা ঠান্ডা হয়ে বিস্বাদ শরবতে পরিনত হয়েছে। কলমদানি
থেকে কলম বের করলাম।
“কোন কোন দেশগুলো আমাদের আমদানি ও রপ্তানি বানিজ্যে বৃহৎ ভূমিকা রাখে?”
“২০২০-২০২১ অর্থবছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে তৈরী পোশাকের বানিজ্যিক হার কেমন
ছিলো? ব্যাখ্যা করো।”
“২০২১-২০২২ অর্থবছরে সম্ভাবনাময় বানিজ্য খাতগুলোর ব্যাখ্যা দাও।”
আমি লিখছি, এসব অর্থনীতির কঠিন ব্যাখ্যা আমার কলম থেকে বের হয় খুব স্বাচ্ছন্দ্যে।
আমি ধীর স্থিরভাবে বিশ্লেষণ করি বিশ্ব অর্থনীতির দুরূহ সম্ভাবনাগুলো, কলম দিয়ে আমি লিখি বাজেট প্রনয়ণের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট। অথচ আমাকে দেখলে কে বলবে বুকের
ভেতর একটা সামুদ্রিক তুফান নিয়ে আমি শান্তভাবে লিখে যাচ্ছি ভৌগোলিক উপাখ্যান?
আমার কাছে আমার সহজ বিষণ্নতার ব্যাখ্যা বড় সহজ হলেও বিষণ্নতার একটা চিঠি
লিখতে গিয়ে বারবার ফুরিয়ে যায় আমার কলমের কালি। বজ্রাঘাতের মতো থেমে যায়
আমার হাত। আমার আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করা চিৎকারগুলো খুব বেশি মূল্যহীন।
কেন যেন হঠাৎ, হঠাৎ আমার ভিতরে চাওয়া থাকা সবটুকু ক্ষোভ যেন ফেটে
পড়তে চাইলো। ঝড়ের রাতে দরজা জানালায় কপট আঘাতের মতো মগজের প্রতিটা
কোষে কোষে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো আমার আশৈশবের সমস্ত চিৎকার। আমি ক্লান্তভাবে তাকে প্রতিহত করতে চাইলাম । আমার অনেক কাজ বাকি , এসব কবিতার প্রেমকে মূল্য দেওয়ার সময় আমার নেই। টাইপরাইটারের আদিম খটখট শব্দের মতো
করে শব্দ হতে লাগলো মস্তিষ্কের খুব গোপন কোনো প্রকোষ্ঠে। একটা একটা করে অদৃশ্য
শব্দ লিখা হচ্ছে-
“তারা ঝরে গেছে প্রায় দেড়শো বছর আগে,
রারের বাতাসে ন্যাপথলিনের ঘ্রাণ-
মেকি উল্লাস মিশে যায় চেনা উৎসবের সমারোহে…..”
রাত ৩.১৮
আমি উঠে দাঁড়ালাম। একটানে ছিঁড়ে ফেললাম আমার ত্রিকোনমিতির খাতাটা, ছিড়ে
ফেললাম দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখা দেশগুলোর মানচিত্রি, অসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক
সমীক্ষাগুলোও ছিঁড়ে ফেললাম- কেননা এগুলো সম্পূর্ণ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার
নেই। আমি লিখতে বসলাম। পুরনো ভেজা নষ্ট সেই খাতাটা, যা আমি নিজের অজান্তেই
রেখে দিয়েছিলাম কোনো এক সমারোহের জন্য- সেই খাতার ঘোলা পৃষ্ঠায় লেখা হতে
থাকলো একের পর এক শব্দ, আনাড়ি কিন্তু স্পষ্ট।
“ভিতর-বাহির খুব ভাংচুর,
কে আসে, কে যায়; আর দেশলাই জ্বলে আগুনের ছদ্মনামে,
একফোঁটা অন্ধকার বেঁচে থাকে যুগ যুগ ধরে।
এসো দ্বিপাক্ষিক সত্যকে শূলেবিদ্ধ করি,
তারপর, অন্ধকার যেগে থাক দেশলাই কাঠিতে-
আমার কিছু যায় আসে না।”
নামতার মতো আওড়ালাম মনে মনে, ‘আমার কিচ্ছু যায় আসে না, আমার কিচ্ছু যায়
আসে না।’ ধুর ছাই, নামতা না- কবিতা। কবিতার মতো করে বললাম মনে মনে,
‘আমার প্রকৃতপক্ষেই কিছু যায় আসে না।’ আমি ফিরে পেয়েছি আমার প্রেমকে। এতদিন
যে না পাওয়া, যে অপ্রেম আমাকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে, আজ তার দিন শেষ। কাল কি
হবে তা জানি না, জানার প্রয়োজন নেই।
কীই বা আসে যায়?
তো আজকে এই পর্যন্তই । আশা করি পোস্টটি সবার ভালো লেগেছে । অনেক কষ্ট করে লিখেছি । পরের গল্প চাইলে কমেন্ট করুন । কোনো কিছু না বুঝতে পারলে কমেন্টে জানান । আর যেকোনো প্রয়োজনে ফেসবুকে আমি
The post [ ধামাকা পোষ্ট ] পড়ে নিন অনন্ত বিষাদগাথা বইটির প্রথম গল্প (কি আসে যায়) appeared first on Trickbd.com.
from Trickbd.com https://ift.tt/YNrjVHa
via IFTTT