চৌগাছায় ড্রাগন চাষ করে অনেকে স্বাবলম্বী

চৌগাছায় ড্রাগন চাষ করে অনেকে স্বাবলম্বী নয়া দিগন্ত

চৌগাছায় ড্রাগন চাষ করে অনেকে স্বাবলম্বী

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর)

khulna

যশোরের চৌগাছায় ড্রাগন চাষ করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ফলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে বিদেশী ফল ড্রাগন। স্থানীয় উদ্যোক্তা ইমামুল হোসেন ইসমাইল প্রথমে ড্রাগন চাষ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেন। তার সফলতা ও স্বাবলম্বী হওয়া দেখে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ইতোমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে দশ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু হয়েছে। এতে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক।

উপজেলার তিলকপুর গ্রামের একছের আলীর ছেলে শিক্ষিত যুবক ইমামুল হোসেন ইসমাইল। তার ইচ্ছা কৃষিভিত্তিক ব্যতিক্রমী কিছু করা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে চাকরি নেন ঢাকার একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। সড়ক দুর্ঘটনায় অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়ে তিনি থাই পেয়ারা, আপেল ও বাউ কুলের বাগান করেন। নতুন কিছু করার চিন্তায় ইন্টারনেটে ড্রাগন চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন তিনি।

ইমামুল হোসেন ইসমাইল জানান, ২০১৫ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারা এনে নিজের দুই বিঘা জমিতে প্রথমে ড্রাগন চাষ করেন। বর্তমানে দশ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন তিনি। প্রতি একর বাগান থেকে প্রথম পর্যায়ে বছরে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করা সম্ভব। এছাড়া চারা বিক্রি করেও আরো কয়েক লাখ টাকা আয় হয় তার।

চাষিরা জানান, প্রতি বছরই এই গাছ বড় হয় এবং ফলনও বাড়ে। প্রতি বছরে টানা সাত মাস এই ফল পাওয়া যায়। একবার চারা লাগালে ৩০ থেকে ৪০ বছর একইভাবে ফল দেয়। তাই ব্যাপক লাভ করা সম্ভব।

উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বুন্দলিতলা গ্রামের চাষি সোলাইমান হোসেন জানান, প্রথম পর্যায়ে ড্রাগন বাগানে টাকা বিনিয়োগ করে ড্রাগন চাষ করা অসম্ভব মনে হতো। তারপরেও ড্রাগন বাগান তৈরি করা শুরু করেন। এক পর্যায়ে নিজের ব্যবসা বন্ধ করে প্রথমে এক বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেন তিনি। তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে প্রথম বছরে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ বাগান থেকে চার লাখেরও বেশি টাকার ড্রাগন ফল ও চারা বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি ড্রাগন ফল গড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। লাভ হওয়ায় তিনি আরো এক বিঘা জমিতে নতুন বাগান করেছেন। সোলাইমান হোসেন আরো জানান, ড্রাগনের সাথে সাথি ফসল হিসেবে পেয়ারা চাষ রয়েছে। যেখান থেকে ড্রাগন বাগান পরিচর্যার খরচ উঠে আসে।

সিংহঝুলী গ্রামের প্রবাসফেরত মিঠু রহমান খান বলেন, ‘বিদেশ থেকে বাড়ি এসে ড্রাগন চাষের কথা মাথায় আসে। বাজারে ড্রাগন ফলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যে কারণে নয় বিঘা জমিতে ড্রাগন বাগান করেছি। বাগানের বয়স এক বছর হয়েছে। গাছে ফল আসছে। অল্প কিছু ড্রাগন ফল ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রিও করেছি।’

চাষিরা জানান, ভেষজ জাতীয় এ ফল চাষ অত্যন্ত লাভজনক। এই ফল চাষ করার জন্য জৈব সারই যথেষ্ট। কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারিরা বাগানে এসে কিনে নিয়ে যান।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দীন বলেন, চৌগাছা এলাকার মাটি ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী। উপজেলায় প্রায় দশ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান রয়েছে। এ ফলটি মিষ্টি ও হালকা টক জাতীয় স্বাদের নানা পুষ্টিগুণে ভরা। ড্রাগন ফল চাষ লাভজনক। সেই কারণে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু হয়েছে। আমরা চাষিদের উৎসাহ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।



from The Daily Nayadiganta http://www.dailynayadiganta.com/khulna/524800/চৌগাছায়-ড্রাগন-চাষ-করে-অনেকে-স্বাবলম্বী
via IFTTT

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট