ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে বিস্তারিত এক পোস্টেই সব কিছু। What is Virtual Reality? [Details]

আসসালামু আলাইকুম। 
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সবাই ভালোই আছেন। 
তো প্রতিদিনের মতো আপনাদের সামনে আমি আবারও নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাঁজির হয়েছি। আমরা আপনাদের কথা মাথায় রেখেই নিত্যনতুন পোস্ট নিয়ে আসি। আজকেও ব্যতিক্রম নয়। আমার এই পোস্ট গুলো পড়লে আপনি কম্পিউটার সম্পর্কে এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে সকল কিছু জানতে পারবেন। কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক ভাবে জানতে পরবেন। তো আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি মূল পোস্টে চলে যায়।
আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে আলোচনা করবো।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (Virtual Reality)

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শব্দটি সর্ব প্রথমে ব্যবহৃত হয় ফরাসি নাট্যকর কবি, নির্দেশক ও অভিনেতা Antonim Artaud (অ্যান্টোনিন আরচিউড) এর The Theatre and Its Double (1938) বইটিতে। এই শব্দটি আরও ব্যবহৃত হয় Demien Broderick (ডেমিয়েন ব্রডরিক) এর সায়েন্স ফিকশন “The Judas Mandala” তে। ১৯৬১ সালে প্রথম মটন এল হেলিগ তার সেন্সোরামা স্টিমুলেটর নামক যন্ত্রের মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির আত্মপ্রকাশ করান। এ প্রযুক্তির সাথে কম্পিউটারের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ১৯৮০ সালের দিকে প্রথম ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা সৃষ্টি হয়। ১৯৮৪ সালে কম্পিউটার হ্যাকার লেনিয়ার সর্বপ্রথম ক্যালিফোর্নিয়ার ডিপিএল রিচার্স করপোরেশনে এ সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করেন।
প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের চেতনা উদ্রেককারী বিজ্ঞান নির্ভর কল্পনাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা অনুভবে বাস্তবতা কিংবা কল্পবাস্তবতা বলে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মূলত কম্পিউটার প্রযুক্তি ও সিমুলেশন তত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ত্রি-মাত্রিক ইমেজ তৈরির মাধ্যমে অতি অসম্ভব কাজও করা সম্ভব। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ যেখানে ব্যবহারকারী ঐ পরিবেশে মগ্ন হয়, বাস্তবের অনুকরণে সৃষ্ট দৃশ্য উপভোগ করে, সেই সাথে বাস্তবের ন্যায় শ্রবণানুভূতি এবং দৈহিক ও মানসিক ভাবাবেগ, উত্তেজনা অনুভূতি প্রভৃতির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে মাল্টিসেন্সর হিউম্যান-কম্পিউটার ইন্টার সেন্সসমূহের ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত থাকে যা মানব ব্যবহারকারীদেরকে কম্পিউটার-সিমুলেটেড অবজেক্ট, স্পেস, কার্যক্রম এবং বিশ্বকে একবারে বাস্তবের মতো অভিজ্ঞতা প্রদানে সক্ষম করে তোলে।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হলো সেই প্রযুক্তি যা সৃষ্টি করে ত্রি-মাত্রিক বিশ্ব এবং জীবন্ত দৃশ্য। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে বাস্তব দৃষ্টিগ্রাহ্য জগৎ তৈরি করা হয় যা উচ্চমাত্রায় তথ্য বিনিময় মাধ্যমের কাজ করে।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির পরিবেশ তৈরির জন্যে কী কী পরিধান করতে হবে? 

ব্যবহারকারীকে মাথায় হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে (Head Mounted Display), হাতে একটি ডেটা গ্লোভ (Data Glove) বা একটি পূর্ণাঙ্গ বডি স্যুইট (Body Suit), চোখে চশমা পরতে হয়। হেডসেটটি চোখ ও কানকে ঢেকে রাখে এবং এটি দ্বারা কোনো দৃশ্য দেখা ও শোনা যায়। হাতের সাথে সংযুক্ত গ্লোভস দ্বারা প্রয়োজনীয় কমান্ড দেওয়া | হয় এবং এটি প্রয়োজনীয় দৃশ্যের অবতারণা অথবা কোনো নির্দিষ্ট কাজের নির্দেশনার কাজ করে থাকে।

প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি- ট-এর প্রভাব (Impact of Virtual reality in life) 

প্রাত্যহিক বাস্তব জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি-এর প্রয়োগ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন- ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেমস তৈরি, কার চালনা প্রশিক্ষণ, বিমান চালনা প্রশিক্ষণ, ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স তৈরি, নগর পরিকল্পনা ইত্যাদি জটিল কাজে ব্যবহার শুরু হয়েছে। 

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ:

চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রেই আজ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার হচ্ছে।

উন্নত বিশ্বে ডাক্তারদের আধুনিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে সার্জিক্যাল প্রশিক্ষণে ‘এমআইএসটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ল্যাপরোস্কোপিক’ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এ পদ্ধতিতে কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে ল্যাপরোস্কোপির পরিচালনার বিভিন্ন কৌশল শেখানো হয়। শিক্ষানবীশ ডাক্তারগণ এর ফলে অত্যন্ত সহজে ও সুবিধাজনক উপায়ে বাস্তবে অপারেশন থিয়েটারে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

আজকাল রোগীরা সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশা করেন। শিক্ষানবীশ সার্জনদের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জনের সবচাইতে বড় সুযোগ হলো অভিজ্ঞ কোনো সার্জনের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। 
চিত্র: ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ
এ ধরনের প্রশিক্ষনের জন্য রোগীর প্রয়োজন পড়ে। এসব অপারেশন প্রচুর সময় নেয়। আর গুণগত মান বহুলাংশেই নির্ভর করে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের শিক্ষাগত দক্ষতার উপর। এক্ষেত্রে সার্জন ছাত্ররা ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে মেডিক্যাল ট্রেনিং টুল হিসেবে খুবই সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে তারা একেবারে অপারেশন থিয়েটারে রোগীর অপারেশন পরিচালনার মতোই বাস্তবিক অভিজ্ঞতা পেয়ে অনুভূতি 1 পেয়ে থাকেন। পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা মানও উন্নত করা যায়। ভার্চুয়াল অপারেটিং কক্ষে ছাত্ররা কৌশলগত দক্ষতা, অপারেশন ও রোগ সম্পর্কিত তাত্ত্বিক বিষয়াদির কার্যপ্রণালি অনুশীলণ করতে সক্ষম হন।

রিয়েলিটির মাধ্যমে ড্রাইভিং নির্দেশনা: 

ড্রাইভিং প্রশিক্ষণে আজকাল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ভার্চুয়ালি ড্রাইভিং শেখা সম্ভব। ড্রাইভিংয়ের নানা নিয়ম-কানুন খুব সহজেই এর ফলে আয় করা সম্ভব। সামূল্যের মাইক্রো কম্পিউটার প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ড্রাইভিং সিমুলেটর উন্নয়ন করা হয়েছে।

কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের জন্য চালককে একটি নির্দিষ্ট আসনে বসতে হয়। চালকের মাথায় পরিহিত হেড় মাউন্টেড ডিসপ্লোর সাহায্যে কম্পিউটার দ্বারা সৃষ্ট যানবাহনের অভ্যন্তরীণ অংশ এবং আশেপাশের রাস্তার পরিবেশের একটি মডেল প্রদর্শন করা হয়। এর সাথে আবার যুক্ত থাকে একটি ‘সিক্স ডিগ্রি  অব-ফ্রিডম’ হেড ট্র্যাকিং সিস্টেম।

 ডিসপ্লে গ্রাফিক্সটি ব্যবহারকারীর মাথার গতি অনুযায়ী সাড়া প্রদান করে। ফলে যানববাহনের অভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক অংশের ৩৬০ ডিগ্রি দর্শন লাভ করেন এবং কম্পিউটার-সৃষ্ট পরিবেশে মগ্ন থাকেন। সিমুলেটরটিকে ব্যবহারকারী অটোমোবাইল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিচালনা করে থাকেন যার মধ্যে রয়েছে এক্সেলারেশন ও ব্রেকিংয়ের জন্য স্টিয়ারিং হুইল ও প্যাডেল।

এ পদ্ধতিতে জরুরি মুহূর্তে যানবাহন পরিচালনা ও এর নিয়কানুন শেখানো হয়। এছাড়া কর নির্ধারণ, লাইসেন্সিং, চালকের শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়গুলোকেও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

চিত্র : ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা: 

যানচলাচল নিয়ন্ত্রণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এখন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সড়ক, আকাশ, রেল এবং জলপথে চলাচলকারী যানবাহনের পরিচালনায় এখন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রতিটি যানচালক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে চালকগণ যদি তাদের যান চালনায় পারদর্শী হন তাহলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হয়। আজকাল সড়ক যানবাহনের আধুনিক চালনা কৌশল হিসেবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার এক্ষেত্রে এনেছে নতুন মাত্রা। সাধারন চালনা কৌশল থেকে শুরু করে জটিল কৌশলগুলোও করা সম্ভব এর মাধ্যমে।

কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত কাল্পনিক পরিবেশে সংকটাপূর্ণ অবস্থায়ও কীভাবে যান পরিচালনা করতে হয় তা এ পদ্ধতিতে শেখা যায় খুব সহজেই। সড়কপথের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা তীব্র যানজটে কীভাবে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তা শিখতে পারেন থ্রিডি উপস্থাপনার মাধ্যমে। ফ্লাইট সিমুলেশনের মাধ্যমে বিমান চালকগণ তাদের বিমান চালনার যাবতীয় কৌশলও রপ্ত করে ফেলতে পারেন। আকাশপথে বিমান চালনার ঝুঁকি সম্পর্কে তারা অবগত হতে পারেন এর মাধ্যমে। প্রতিটি বিমান বন্দরে শত শত বিমানের ওঠানামা তদারকির জন্য বিমান কর্তৃপক্ষকেও সাহায্য করছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। কাল্পনিক বাস্তবতায় বিমান ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তাদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

এর মাধ্যমে। কখন কোন বিমানটি আকাশে উড়বে কিংবা কোন বিমানটি রানওয়ে স্পর্শ করবে তার দেখাশুনা করার জটিল দায়িত্ব অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সংবলিত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

রেলপথ এবং জলপথে চলাচলকারী যানের ক্ষেত্রেও একইভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগ করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

 ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে ফ্লাইট সিমুলেশন: 

ফ্লাইট সিমুলেশন হলো এমন একটি কাজ যা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কৌশল প্রয়োগ করে বেসরকারি বা সামরিক বিমান চালকদের কোন ধরনের সত্যিকার উড়োজাহাজ ব্যবহার না করে শুধুমাত্র স্পর্শকাতর কমপিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে বিমান পরিচালনার প্রশিক্ষণ প্রদান করে। উন্নত বিশ্বের বাণিজ্যিক বিমান সংস্থা কিবা সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে বিমান পরিচালনা প্রশিক্ষণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করছে। এজন্য ফ্লাইট সিমুলেটর ব্যবহার করা হয়। ফলে বিমান চালকগণ অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বিমান পরিচালনার নতুন নতুন দক্ষতা উন্নয়ন, নতুন বিমানের ফ্লাইট বৈশিষ্ট্যাবলি আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। ফ্লাইট সিমুলেটরের অভ্যন্তরে যেমন বোয়িং ৭৪৭ সিমুলেটরে ককপিটের ভেতর কন্ট্রোল প্যানেলটি একেবারে সত্যিকারের বিমানের হুবহু থাকে। ককপিটের ভেতরে সজ্জিত থাকে একসারি যন্ত্রপাতি, জয়োস্টিক, লিভার, সুইচ, বাটন, স্লাইডার প্রভৃতি। চালকের আসনটি মেঝের সাথে সংযুক্ত থাকে। টেকঅফ বা ল্যান্ডিংয়ের দৃশ্যপর্বে তারা তাদের সিটবেল্টগুলো বেঁধে নেন।

জানালাসমূহের বাইরের দিকে স্পর্শকাতর কম্পিউটারের মাধ্যমে ডিসপ্লে তৈরি হয় যাকে কম্পিউটার জেনেরেটেড ইমেজ বা সিজিআই নামে অভিহিত করা হয়। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী যখন সিমুলেটরের ভেতরে টেনঅফ করেন তিনি তখন একটি বাস্তব বিমান বন্দর ও তার আশপাশের এলাকা প্রত্যক্ষ করেন। বোয়িং ফিল্ডের সিমুলেশনটি মুহূর্তের মধ্যে রানওয়েতে ফুয়েল ট্রাক এবং অদূরেই মাউন্ট রেইনিয়ারকে দেখতে পান। চালক অন্যান্য বিমান গমনাগমনের শব্দ, ডানার শব্দ শুনতে পান যা আসলে তখন সেখানে অনুপস্থিত থাকে। এছাড়াও চিত্র: ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে বিমান চালনা প্রশিক্ষণ সিমুলেটরটি ছয়টি হাইড্রোলিক পদ্ধতির মাধ্যমে নিচের দিকে ঝুঁকে থাকে। এসমস্ত বিষয়গুলো এমন ধরনের পরিবেশ যা আবহ তৈরি করে যা ফলে প্রশিক্ষণার্থী মনে করেন তিনি সত্যিকারের বিমানই নিয়ন্ত্রণ করছেন মহাশূন্য অভিযানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি: যেদিন থেকে মানুষ পৃথিবীর বাইরে পা রাখতে শুরু করল সেদিন থেকেই মহাবিশ্ব জয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা মানুষের মনে স্থান করে নিল। আর পর থেকেই শুরু হলো মহাবিশ্ব জয়ের অভিযান। এই অভিযানের প্রতিটি পর্বেই রয়েছে নানা ধরনের ঝুঁকি। প্রস্তুতিপর্বের নানা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিরীক্ষা, নভোচারীদের কার্যক্রম, নভোযান পরিচালনা সম্পর্কিত যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রশিক্ষণে তাই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।

কাল্পনিক পরিবেশে মহাকাশে গবেষণা পরিচালনার বিষয়গুলো, মহাশূন্যে খাপ খাওয়ানোর মতো বিষয়গুলো পূর্বেই প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন নভোচারীগণ।

মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল এরোনটিক্যাল এন্ড স্পেস এনমিনিস্ট্রেশন (নাসা)’ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সংস্থাটি তার কার্যক্রমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগ করে থাকে। কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে মহাকাশের পরিবেশ, সেসব পরিবেশে খাপ খাইয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা, গবেষণা কিভাবে পরিচালনা করতে হবে তা মহাশূন্যে অভিযানের পূর্বেই শিখে নিতে পারেন নভোচারীগণ। হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে, ডেটা গ্লোভস ব্যবহার করে কাল্পনিক বাস্তবতায় তারা এসব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকেন।

মহাশূন্যে নভোথেয়াযান বিকল হয়ে গেলে কীভাবে তা সারাতে হবে, কোন যন্ত্র অকেজো হলে তাকে কীভাবে কার্যক্ষম করা যাবে তার প্রশিক্ষণও এর মাধ্যমে দেয়া হয়। এর ফলে মহাকাশে তাদের ভ্রমণ অনেক নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়। 

ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষা : 

ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার জন্য জাদুঘরে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি-এর প্রয়োগ হচ্ছে, ফলে আগত দর্শনার্থীরা তা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন ও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ করছেন। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি-এর মাধ্যমে উপস্থাপনার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।
চিত্রঃ ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার।

বিভিন্ন ইমেজ সংরক্ষণ ও দৃশ্যধারণ:

 বিভিন্ন সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য ধারণ করতে এনিমেশন করার সময় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়। জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজ “স্টারট্রাক” এর অধিকাংশ দৃশ্য ধারণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হয়েছে। তাছাড়া বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে বিভিন্ন ইমেজ শনাক্ত করতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি-এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের থেরাপি দেওয়া হয়। তাছাড়া রোগ নির্ণয়েও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়।
অপারেশনের সময় রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হচ্ছে।

গেমস তৈরি: 

গেমস তৈরি করতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি-এর ব্যাপক প্রয়োগ হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রচলিত অধিকাংশ গেমসই এ মডেল অনুসরণ করে তৈরি। ভার্চুয়াল স্পোর্টস, ভার্চুয়াল পুলিশ কপ, ভার্চুয়াল এ্যারোস্পেস ইত্যাদি ধরনের গেমসে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চিত্র: কম্পিউটার গেম

সেনাবাহিনীতে: 

সেনাবাহিনীতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি-এর প্রয়োগ করে অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি কাজ কম সময়ে, নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা যাচ্ছে। রাতে যুদ্ধ পরিচালনা, শত্রুর অবস্থান নির্ণয় ইত্যাদি কাজে উন্নত যুদ্ধসামগ্রীতে ব্যাপকভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়। নৌবাহিনীতে: নৌবাহিনীতে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ, ডুবোজাহাজ চালনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগ হচ্ছে। এছাড়া শত্রু জাহাজের অবস্থান নির্ণয় ও রাতে যুদ্ধ পরিচালনায় ব্যাপকভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়।

নগর পরিকল্পনায়: 

নগর পরিকল্পনায় ত্রি-মাত্রিক ভার্চুয়াল রিয়েলিটি-এর প্রয়োগ ঘটিয়ে নগর উন্নয়ন রূপরেখা, নগর যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদি সহজ ও আকর্ষণীয়ভাবে বর্ণনা করা যায়। এছাড়া পণ্যের নকশা প্রণয়ন, কম্পিউটারনির্ভর ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রইং, বিভিন্ন ত্রি-মাত্রিক এনিমেশন সিনেমা তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি-এর ব্যাপক প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়।
চিত্র: নগর পরিকল্পনায় তথ্য প্রযুক্তি

সমাজে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির নেতিবাচক প্রভাব চিহ্নিত করা হলোঃ

  • ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদির দাম ও জটিলতা বেশী এবং এই প্রযুক্তিতে প্রোগ্রামও খুবই মূল্যবান ও ব্যয়বহুল। 
  • ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ফলে বর্তমান সমাজের মনুষ্যত্বহীনতা বা পাচ্ছে। 
  • ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ফলে মানুষ ইচ্ছেমতো কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করতে পারবে। ফলে দেখা যাবে মানুষ বেশিরভাগ সময় কাটাবে কল্পনার জগতে এবং খুব কম সময় থাকবে বাস্তব জগতে। কিন্তু এভাবে যদি মানুষ কল্পনা ও বাস্তবের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারে তাহলে পৃথিবীতে চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করবে।
  •  ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারের ফলে মানুষের চোখের ও শ্রবনশক্তির ক্ষতি হতে পারে

তো আজ এই পর্যন্তই শেষ করছি। আশা করছি এই পোস্টের খুব শীঘ্রই তৃতীয় অর্থাৎ শেষ পর্ব নিয়ে আসবো।

উপরের আমার এই পোস্টটি লিখতে অনেক নথির এবং ওয়েসাইটের সাহায্য নিতে হয়েছে। যাদের কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করলেই নয়। 

সহায়ক,

মোঃ কামরুল হাসান।

1. HSC ict book

2. Wikipedia.com

3. hpe.com

4. history-computer.com

5. civilian 

তো আজ এই পর্যন্তই। আপনাদের জন্যই আমরা নিয়মিত নিত্যনতুন পোস্ট নিয়ে হাঁজির হই।

তাই উক্ত পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক দিতে ভুলবেন না। এবং যেকোনো মন্তব্য বা পরামর্শের জন্য কমেন্ট করতে পারেন। পরবর্তীতে নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে হাজির হবো ততক্ষণ সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ্য থাকবেন।

ধন্যবাদ

The post ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে বিস্তারিত এক পোস্টেই সব কিছু। What is Virtual Reality? [Details] appeared first on Trickbd.com.



from Trickbd.com https://ift.tt/N7xmDRb
via IFTTT

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট