ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এ মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরুটা কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার থেকে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না।
আপওয়ার্কসহ বেশির ভাগ মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার জন্য ক্লায়েন্টদের কাছে কভার লেটার বা প্রস্তাব পাঠাতে হয়। আর তাই ভালো মানের কভার লেটার তৈরি করতে পারলে ক্লায়েন্টরা আপনার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে। ফলে আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে আগ্রহী অনেকেই ক্লায়েন্টের জন্য আকর্ষণীয় ভালো মানের কভার লেটার লিখতে পারে না। অনেকে আবার কভার লেটারে অপ্রাসঙ্গিক তথ্য যুক্ত করে বা একই কভার লেটার সব কাজের জন্য পাঠায়। ফলে ক্লায়েন্টরা বিরক্ত হয়ে কাজের অর্ডার দেয় না। এভাবে একাধিকবার কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে যান তাঁরা। সমস্যা সমাধানে ফ্রিল্যান্সারদের অবশ্যই ভালো মানের কভার লেটার তৈরি করতে হবে।
কভার লেটার লেখার সময় তাড়াহুড়ো করা যাবে না। শুধু তা–ই নয়, ক্লায়েন্টের কাজের ধরন বিবেচনা করে প্রতিবারই নতুন করে কভার লেটার লিখতে হবে। কাজের ধরন যা–ই হোক না কেন, প্রতিটি কভার লেটারেই আপনার সম্পর্কে সংক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য দিতে হবে। কারণ, মার্কেটপ্লেসে একই কাজের জন্য একসঙ্গে একাধিক ফ্রিল্যান্সার ক্লায়েন্টদের কাছে কভার লেটার পাঠিয়ে থাকেন। ফলে ক্লায়েন্টরা প্রতিটি কভার লেটারই খুব অল্প সময়ের মধ্যে পড়ে আগ্রহীদের যোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করেন। আর তাই ক্লায়েন্টদের মনোযোগ আকর্ষণে অল্প কথায় ভালো মানের কভার লেটার তৈরি করতে হবে। আপওয়ার্কসহ বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে ক্লায়েন্টরা সাধারণত লিস্ট ভিউ অপশনে কভার লেটারের প্রথম দুটি লাইন দেখতে পান। ফলে কভার লেটারের প্রথম দুটি লাইন ক্লায়েন্টদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই লাইন দেখে সন্তুষ্ট হলেই সাধারণত ক্লায়েন্টরা আপনার বিস্তারিত তথ্য জানতে আগ্রহী হবে। ভালো মানের কভার লেটারে নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই থাকতে হবে।
শুভেচ্ছা
কভার লেটার লেখার শুরুতেই হাই বা হ্যালো লিখে ক্লায়েন্টের নাম লিখতে হবে। ক্লায়েন্টের নাম না জানলে শুধু হ্যালো বা হাই দিয়ে শুরু করতে পারেন।
প্রথম দুই লাইন
বেশির ভাগ নতুন ফ্রিল্যান্সার কভার লেটারের শুরুতেই নিজের নাম এবং বিভিন্ন তথ্য লিখেন। কিন্তু কভার লেটারের শুরুতে নিজের নাম দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, আপনি যখনই কাজ করার প্রস্তাব পাঠাবেন, তখনই ক্লায়েন্টরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার নাম দেখতে পারবেন। আর তাই কভার লেটারের শুরুতে ক্লায়েন্টের কাজের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য লিখতে হবে। যেমন কোনো ক্লায়েন্ট যদি জব পোস্ট করে লেখেন, ‘আমি আমার ওয়েবসাইটের স্পিড রেজাল্ট ভালো করতে চাচ্ছি যেন সেটি গুগলে ভালো স্কোর করতে পারে। আমি দ্রুত এই কাজটি করতে চাই।’ উত্তরে আপনি লিখতে পারেন, ‘গুগল পেজ স্পিড স্কোর একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জিং এবং মজার কাজ। আমি এই চ্যালেঞ্জটি নিতে পছন্দ করি। এই তো কিছুদিন আগে একটি জনপ্রিয় ফ্যাশন ওয়েবসাইটের স্কোর ২৫ থেকে ৯৫ করলাম। আমি দ্রুত তোমার কাজটি করতে পারব।’ এখানে প্রথম লাইনে পেজ স্কোর বিষয়ে আপনি ভালো ধারণা রাখেন তা ক্লায়েন্টকে জানালেন। দ্বিতীয় লাইনে একই ধরনের কাজে আপনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি দ্রুত কাজটি করতে পারবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। ফলে ক্লায়েন্ট আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবে এবং আপনাকে কাজটি দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে।
কাজ নিয়ে আলোচনা
ক্লায়েন্টের পোস্ট করা কাজের খুঁটিনাটি তথ্য আপনি যে বুঝতে পেরেছেন তা এই বিভাগে তুলে ধরতে হবে। সম্ভব হলে পয়েন্ট আকারে কাজের খুঁটিনাটি তথ্য নিয়ে আলোচনা করতে হবে, যেন ক্লায়েন্ট বুঝতে পারে আপনি তার দেওয়া কাজ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
অভিজ্ঞতা
ক্লায়েন্টের পোস্ট করা কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত আপনার অভিজ্ঞতার তথ্য এখানে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে পারেন। চাইলে কাজগুলোর রেফারেন্স লিংকও দিতে পারেন। কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলে এই অংশটি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
আস্থা অর্জন
আপনাকে কাজ দিলে ক্লায়েন্ট কেন নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে, তা এই অংশে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে। যেমন লোগো ডিজাইনের কাজ পেতে আপনি লিখতে পারেন, ‘আমি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির লোগো নিয়ে কাজ করছি প্রায় তিন বছর, আমার প্রোফাইলে গেলে তুমি দেখতে পাবে, এখন পর্যন্ত আমি প্রায় ৫০টির বেশি কাজ করেছি। ৯৮ শতাংশ ক্লায়েন্টই আমাকে পাঁচ তারকা রেটিং দিয়েছে। তোমার কাজের ধরন বা লোগো দেখে আমি বুঝতে পারছি, তুমি মিনিমাল লোগো করাতে চাচ্ছ। বেশির ভাগ সময়ই আমি মিনিমাল লোগো নিয়েই কাজ করেছি।’
প্রশ্ন
কাজের ধরন বিস্তারিত পড়ার পর আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে সেটি অবশ্যই এই বিভাগে উল্লেখ করতে হবে। আপনার করা প্রশ্ন দেখলেও ক্লায়েন্ট বুঝতে পারবে যে আপনি তার কাজের চাহিদা ভালোভাবে পড়েছেন এবং বোঝার চেষ্টা করছেন। প্রশ্নের উত্তর দিলে ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলার একটি সুযোগ তৈরি হবে। ফলে ক্লায়েন্টকে নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সরাসরি জানানো যাবে।
ক্লায়েন্টদের উৎসাহী করতে হবে
আপনার সঙ্গে কাজ করার জন্য ক্লায়েন্টদের উৎসাহী করতে এই বিভাগে বিভিন্ন তথ্য লিখতে হবে। কভার লেটারের একদম শেষ অংশে থাকা বিভাগটিতে এমন কিছু লিখতে হবে যেন ক্লায়েন্ট আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে আগ্রহী হয়। এ জন্য আপনি লিখতে পারেন, ‘তোমার অবসর সময়ে আমরা কল করে কাজের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারি।’ অথবা ‘তোমার কাছ থেকে প্রশ্নের উত্তরগুলো পেলে আমি কাজের বিশ্লেষণ আরও ভালোভাবে করে তোমাকে জানাতে পারবো।’
এই কথাগুলো বেশির ভাগ সময়ই ক্লায়েন্টদের মনোযোগ আকর্ষণ করে থাকে। কারণ, অনেক ক্লায়েন্ট বার্তা বিনিময়ের বদলে সরাসরি কাজ নিয়ে আলোচনা করতে চায়। ফলে আপনি নিজ থেকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ায় তারা আপনার সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী হবে এবং কাজটি করার সুযোগ দেবে।
শেষ অংশ
কভার লেটারের একেবারে শেষ অংশে নিজের নাম এবং মার্কেটপ্লেসের লেভেল উল্লেখ করতে হবে। আপনি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তবে সেখানে আপনি পদবিও উল্লেখ করতে পারেন।
মন্তব্য
চিঠির একেবারে শেষে আমরা সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করতে ‘পুনশ্চ’ লিখে থাকি। কভার লেটারের মন্তব্যও অনেকটা তেমনই। ক্লায়েন্টকে কোনো বিষয় মনে করিয়ে দিতে এ অংশে বিভিন্ন তথ্য যুক্ত করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনি লিখতে পারেন, ‘তুমি চাইলেই কাজটি সম্পর্কে আমার সঙ্গে ১০ মিনিট বিনা মূল্যে পরামর্শ করতে পারো। আজ এবং আগামীকাল আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারব।’ লেখাটি পড়ে ক্লায়েন্ট আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারে। এতে ক্লায়েন্টের সঙ্গে আপনার সরাসরি যোগাযোগ হবে এবং কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
ভালো মানের কভার লেটার তৈরি করতে পারলে অনলাইনে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এ জন্য ক্লায়েন্টদের কাজের চাহিদার ওপর নির্ভর করে আলাদা কভার লেটার ব্যবহার করতে হবে। চাইলে বড় বা ছোটও করা যাবে। তবে আপনি যে তথ্যই দেন না কেন, সেগুলো যেন সত্যি হয়। মিথ্যা তথ্য দিয়ে মার্কেটপ্লেসে আপনি কখনই সফল হবেন না।
The post ফ্রিল্যান্সিং: যেভাবে আকর্ষণীয় কভার লেটার তৈরি করবেন appeared first on Trickbd.com.
from Trickbd.com https://ift.tt/EqAUZCV
via IFTTT