ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এ মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরুটা কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার থেকে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না।
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার জন্য পোর্টফোলিও বা কাজের নমুনা তৈরি করে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসেই প্রোফাইলের সঙ্গে পোর্টফোলিও বা নিজের করা কাজের নমুনা যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। ভালো মানের পোর্টফোলিওর অভাবে অনেকের প্রোফাইলই ক্লায়েন্টদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে না। কারণ, অনেক ক্লায়েন্ট কাজের অর্ডার দেওয়ার আগে আপনার সম্পর্কে ধারণা পেতে বিভিন্ন কাজের নমুনা দেখতে চায়। আপনি যদি দ্রুত নমুনাগুলো দেখাতে না পরেন তবে ক্লায়েন্টরা কাজ না–ও দিতে পারে। আর তাই আপনি ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে যে কাজই করেন না কেন নিজের করা কাজের নমুনাগুলো আগে থেকেই তৈরি করে প্রদর্শন করতে হবে। নমুনার পাশাপাশি নিজের করা উল্লেখযোগ্য তিন থেকে চারটি কাজের পিডিএফ ফরম্যাট প্রস্তুত রাখতে হবে।
সব মার্কেটপ্লেসেই প্রতিটি প্রোফাইলের জন্য আলাদা পোর্টফোলিও যুক্ত করার অপশন রয়েছে। ফলে আপনি বেশ কিছু ভালোমানের কাজের নমুনা এই পোর্টফোলিও বিভাগে যুক্ত করতে পারবেন। মার্কেটপ্লেসের পাশাপাশি বিহ্যান্স ও ড্রিবলসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিনা মূল্যে পোর্টফোলিও প্রদর্শন করা যায়। তবে সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি নিজেই একটি ওয়েবসাইট খুলে পোর্টফোলিও প্রদর্শন করতে পারেন। এর ফলে আপনি মার্কেটপ্লেসের পাশাপাশি সরাসরি কাজেরও অর্ডার পেতে পারেন। পোর্টফোলিওতে আপনার কাজের নমুনা দেওয়ার পাশাপাশি অবশ্যই ছবি যুক্ত করতে হবে। আপনার কাজের তথ্য অল্প কথায় বর্ণনা করতে পারলে ভালো হয়। কারণ, লেখা বড় হলে ক্লায়েন্টরা পড়তে আগ্রহী হয় না এবং প্রোফাইল থেকেই বের হয়ে যায়। আর তাই মার্কেটপ্লেসের পাশাপাশি সরাসরি ক্লায়েন্টের কাজ পাওয়ার উপযোগী করে পোর্টফোলিও তৈরি করতে হবে।
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে আপনি যে ধরনের কাজই করেন না কেন নিজের পোর্টফলিও ওয়েবসাইট বানানোর জন্য আপনাকে নিচের বিষয়গুলো মানতে হবে।
ওয়েবসাইটের নকশা
পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটের নকশা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন আপনার করা উল্লেখযোগ্য সব কাজের তথ্য সহজেই দেখা যায়। ওয়েবসাইটে বেশি নকশা বা ফিচার ব্যবহার না করাই ভালো। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য বা ফিচার যুক্ত করা যাবে না, যেগুলো দেখলে ক্লায়েন্টরা বিরক্ত হয়।
দক্ষতার তথ্য
আপনি যেসব কাজে দক্ষ শুধু সেসব তথ্য পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটে যুক্ত করতে হবে। কোনো বিষয় না জানলে বা অল্প ধারণা থাকলে তা উল্লেখ না করাই ভালো। অর্থাৎ আপনার হয়তো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) সম্পর্কে ধারণা রয়েছে, কিন্তু পোর্টফোলিওতে লিখলেন আপনি ফেসবুক বিজ্ঞাপন ও গুগল সার্ভিসে দক্ষ। পরে কোনো ক্লায়েন্ট যদি আপনাকে কাজগুলো করতে দেয়, তাহলে আপনার সম্পর্কে ধারণা খারাপ হবে। এমনকি আপনি যে বিষয়ে সত্যিই দক্ষ, সে বিষয়েও তার সন্দেহ তৈরি হবে এবং আপনাকে কাজ দেবে না।
ব্যক্তিগত তথ্য
ওয়েবসাইটে সুন্দর ছবি দিয়ে সহজ ভাষায় নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। নিজের শখ, কী করতে ভালোবাসেন, আপনার করা কোনো কাজ গণমাধ্যম বা ওয়েব পোর্টালে প্রকাশ হয়েছে কি না, তা–ও তুলে ধরতে পারেন।
যোগাযোগ
আপনার সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের জন্য ই–মেইল ঠিকানার পাশাপাশি টেলিফোন নম্বর দিতে হবে। বর্তমানে অনলাইনে বেশ কিছু যোগাযোগের টুলস পাওয়া যায়, সেগুলোও ওয়েবসাইটে যুক্ত করতে পারেন।
সেবার ধরন
আপনি কোন ধরনের সেবা দিতে সক্ষম তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে হবে। প্রয়োজন হলে সেবার ধরনের আওতায় একাধিক পেজে সহায়ক বিভিন্ন কাজের তথ্য উপস্থাপন করতে পারেন।
কাজ
আপনি আগে কোনো ক্লায়েন্টের কাজ করে থাকলে এ বিভাগে সেসব কাজের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে হবে। যদি কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকে, তবে কোনো সমস্যা নেই। বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের করা ভালো মানের কাজগুলো নিজে নিজে শেখার চেষ্টা করুন। শেখার পর নিজের করা কাজগুলো বিভাগটিতে প্রদর্শন করতে হবে।
গ্যালারি
আপনি যেসব কাজে দক্ষ সেসব বিষয়ে করা আপনার কাজগুলোর ছবি এই বিভাগে জমা রাখতে হবে। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ছবিগুলো যেন কম্পিউটারের পাশাপাশি মোবাইলেও ভালোভাবে দেখা যায়।
হোমপেজ
ওয়েবসাইটে থাকা সব তথ্য একনজরে দেখার সুযোগ করে দেয় হোমপেজ। আর তাই এখানে সংক্ষিপ্তভাবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য তুলে ধরতে হবে।
ব্র্যান্ডিং
আপনার তৈরি করা ওয়েবসাইটটি যেন আপনার দক্ষতা ও উল্লেখযোগ্য দিক ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারে, তা খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য অবশ্যই ওয়েবসাইটে সঠিক ফন্ট ও রঙের ব্যবহার করতে হবে।
প্রশংসাপত্র
এই বিভাগে আগে করা কোনো কাজের বিষয়ে অন্য ক্লায়েন্টদের প্রশংসাপত্র যুক্ত করে দিতে পারেন। ফলে ক্লায়েন্টরা কাজ দেওয়ার আগেই আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবে এবং কাজ দিতে আগ্রহী হবে।
ব্লগ
আপনার যদি লেখালেখির শখ এবং সময় থাকে, তাহলে একটি ব্লগ সেকশন যুক্ত করে দিতে পারেন। এতে ক্লায়েন্টরা আপনার বিষয়ে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ পাবে।
পেমেন্ট গেটওয়ে
আপনি কোন মাধ্যমে আপনার পারিশ্রমিক নিতে আগ্রহী, তা এই বিভাগে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে হবে। আপনি চাইলে বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে যুক্ত করে দিতে পারেন, যেন ক্লায়েন্টরা সহজেই আপনাকে অর্থ পরিশোধ করতে পারে।
The post ফ্রিল্যান্সিং: পোর্টফোলিও তৈরির পদ্ধতি appeared first on Trickbd.com.
from Trickbd.com https://ift.tt/fXIrenD
via IFTTT