জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে শরী‘আতে সার্বিক দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلاَلاً طَيِّبًا وَلاَ تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِيْنٌ ‘হে মানবকুল! তোমরা পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত ভক্ষণ কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (বাক্বারাহ ২/১৬৮)।
অন্যত্র তিনি বলেন,فَكُلُوْا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ حَلاَلاً طَيِّبًا وَاشْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ ‘আল্লাহ তোমাদেরকে হালাল ও পবিত্র যা দিয়েছেন তা হ’তে আহার কর এবং আল্লাহর নে‘মতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত কর’ (নাহল ১৬/১১৪)।
ইসলাম হারাম উপার্জনকে নিষিদ্ধ করেছে। কারণ এটা উপার্জনকারীর জন্য দুর্ভাগ্য ও বিপদ ডেকে আনে। পরকালীন কঠিন শাস্তির সাথে সাথে এর কারণে মানুষের হৃদয় কঠোর হয়, ঈমানী নূর নির্বাপিত হয়, আল্লাহর অসন্তোষ অবধারিত হয়। দো‘আ কবুলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। অতএব হারাম আয়-উপার্জন পরিত্যাগ করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
বেশ কিছু বছর ধরে অনলাইনে মানুষের
উপার্জনের অনেক মাধ্যম দেখেছি। কিন্তু এর মধ্যে খুব কম সংখ্যক পদ্ধতি আমার কাছে হালাল মনে হয়েছে। অনেকেই এখন আউটসোর্সিং এর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অনকেই ভাবে অনলাইনে ইনকাম করছি এগুলা সব হালাল কেননা এখানে অফলাইনের মত চুরি বাটপারি ঘুষ এইসব নেই।আমি অনেক দীনদার ব্যাক্তি কে দেখেছি যারা তাদের অজান্তেই হারাম ভাবে ইনকাম করেছে। সল্প জ্ঞানের কারণে অনেকের মাঝে একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে এবং সেটি হল: আমি অনলাইনে ইনকাম করছি, চুরি ডাকাতি করছি না। কিন্তু ইসলাম ধর্ম এবং অন্যান্য ধর্ম অনুযায়ী হালাল উপার্জনের কিছু নীতিমালা আছে এবং সেটি অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমার দীর্ঘদিনের রিসার্চ এর মাধ্যমে আমি অনলাইনে উপার্জনের কিছু মাধ্যম কে লিস্ট করেছি এবং তাদের হালাল ও হারাম অনুযায়ী সাজিয়েছি। ইনশাআল্লাহ যতেষ্ট রেফারেন্স এর মাধ্যমে আজকে আমি আমার মতামত শেয়ার করব।
আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন। (সুরা বাকারা : ২৭৫)
আমরা অনেকে আমাদের অজান্তেই এই ব্যাবসা কে করে ফেলি হারাম। আমাদের হালাল ব্যাবসা হারাম হওয়ার কিছু কারণ হল
–>মিথ্যা কথা বলা
–>ওজনে কম দেয়া
–>সুদের সাথে সম্পর্ক করা
–>হারাম পণ্য বিক্রি
–>বাটপারি করা
আমার দেখামতে নিম্নোক্ত কিছু মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ইনকাম করে থাকে আমাদের দেশের অনলাইন প্রেমিকরা।
~সার্ভে
~বিজ্ঞাপন ক্লিক করে
~ইউটিউব
~ব্লগ
~মুভি ওয়েবসাইট
সার্ভে
অনেকদিন ধরে এই মাধ্যমে অনেক মানুষ কে ইনকাম করতে দেখছি। প্রথমে বলে নেই সার্ভে কি এবং এখানে কিভাবে আয় করা হয়।
অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বিক্রি করার জন্য , বা নতুন কোনো প্রকল্প, পরিকল্পনা ইত্যাদি বিভিন্ন কিছুর জন্য জরিপ করে থাকে। আগে আমাদের গ্রামে শহরে এমন নানান কিছুর জরিপ হত। কিন্তু বর্তমানে অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও এইসব জরিপ হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন গুগল তাদের প্রযুক্তির মাধ্যমে অটোমেটিক একটা প্রফাইল তৈরি করে এই কাজটি করে নেয়, পরবর্তীতে এই নিয়ে আরেকটি পোস্ট দিব। এই অনলাইনে জরিপ করতে গিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ইউজার দের কে অল্প পরিমাণে কিছু রিওয়ার্ড দিয়ে থাকে। এটি হল মূলত সার্ভে এর মাধ্যমে ইনকাম করা।
এখন যে প্রতিষ্ঠান আপনাকে রিওয়ার্ড দিবে তাদের কিছু রিকোয়ারমেন্ট থাকে যেমন: আপনাকে নির্দিষ্ট এলাকায় বা লোকেশনে বসবাস করতে হবে, আপনাকে জিজ্ঞেস করা সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশে যে অবস্থা দেখা যায় সেটি হল আমাদের দেশের লোকেশনের জন্য তেমন কোনো সার্ভে থাকে না। এই কারণে অনেকে ফেইক আইপি ব্যাবহার করে এই জরিপে অংশ নেই এবং আমরা জানি ইসলামে যা সম্পূর্ন অবৈধ। জরিপে অংশ নেয়া সকল প্রশ্নের উত্তর আমরা বানিয়ে দেই, আমরা যে লোকেশনে থাকি না সেই লোকেশনের সঠিক প্রশ্নের উত্তর দেয়া অসম্ভব ব্যাপার। এই ভাবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে এবং বাটপারি করে ইনকাম ইসলাম সমর্থন করে না এবং কোনো ধর্মই সেটি সমর্থন করে না।
আপনাদের এইসব উল্টাপাল্টা সার্ভে করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান টির আর্থিক ক্ষতিসহ আরো নানান ধরনের ক্ষতি হচ্ছে তাই আমার সাজেশন থাকবে হালাল ভাবে ইনকাম করুন এবং এই হারাম পথকে বর্জন করুন।
বিজ্ঞাপন ক্লিক করে
অনেক ওয়েবসাইট এবং থার্ড পার্টি কিছু অ্যাপস আছে যেখানে কিছু নির্দিষ্ট সময় পর পর বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে এডসেন্স বা অন্য কোনো বিজ্ঞাপন কোম্পানি কে ব্যাবহার করে টাকা উপার্জন করা হয়। মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম অনেক গ্রুপ আছে যেখানে অনেককে দলবদ্ধভাবে বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে এডসেন্স এর অপব্যাবহার করতে দেখেছি।
বিজ্ঞাপন কোম্পানি গুলো মূলত পরিচালিত হয় একটি নির্দিষ্ট সিস্টেমে। অনেক কোম্পানি তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয় এবং টার্গেট থেকে বিজ্ঞাপন কোম্পানি গুলো থেকে তারা কিছু ভিজিটর/ট্রাফিক পাবে। কোম্পানির প্রচারণা, পণ্যের প্রচারণা এইসব কিছু চিন্তে করে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। কিন্তু এডসেন্স এর এইভাবে অপব্যাবহার করার ফলে এতে বিজ্ঞাপন কোম্পানিসহ যে কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন দিয়েছে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইসলামে এই ধরনের সকল কাজ নাজায়েজ।
ইউটিউব
ইউটিউব এ টাকা উপার্জনের অনেক মাধ্যম আছে।
~বিজ্ঞাপন
~মার্কেটিং
~স্পন্সর
ইউটিউব ভিডিও আপলোড করার ফলে ইউটিউব থেকে চ্যানেল মনিটাইজ করে দেয় এবং সেখানে বিজ্ঞাপন দেখানো চালু হয় এবং বিনিময়ে তারা আপনাকে কিছু পরিমাণ অর্থ দেয়। এই পদ্ধতিতে উপার্জন অনেক স্কলার, আলেমরা হারাম বলেছে। ইউটিউবে যেসকল আলেমগণ আছে দেখবেন তাদের কোনো চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখা যায় না। এটি হারাম হওয়ার কারণ হল এই বিজ্ঞাপন আপনি কন্ট্রোল করতে পারবেন না। সেখানে হারাম পণ্য, গান বাজনা, হারাম অনেক কিছুর বিজ্ঞাপন আসতে পারে যা ইসলাম সমর্থন করে না।
মার্কেটিং: আপনি মার্কেটিং করে হালাল ভাবে হালাল পণ্য বিক্রি করে উপার্জন করতে পারেন। পদ্ধতি হালাল হলে এইভাবে কোনো সমস্যা নেই।
স্পন্সর: বড় ইউটিউব চ্যানেল হলে স্পন্সর এর মাধ্যমে আপনি টাকা উপার্জন করতে পারেন। স্পন্সর যদি হারাম কোনো কিছুর স্পন্সর না করে তাহলে আপনি নির্দ্বিধায় এই মাধ্যমে উপার্জন করতে পারেন।
ব্লগ
অনেকে লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করে। নিজস্ব ওয়েবসাইটে এডসেন্স বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভালই উপার্জন করা যায়। অনেক ফেইমাস ব্লগার আছে ইন্টারনেটে যারা প্রতিমাসে হাজার থেকে লাখ টাকা ইনকাম করে। কিন্তু ইউটিউবের মতোই এখানেও হারাম হালাল ভাগ আছে। আপনি কি হালাল মাধ্যমে উপার্জন করছেন না হারাম সেটি আপনাকে দেখতে হবে। আপনি হারাম কোনো কিছুকে প্রমোট করে লিখালিখি করলে সেটি হবে হারাম এবং এর উল্টোটা অবশ্যই হালাল।
ওয়েবসাইট
মুভি,গান,গেইমস আরো অনেক কিছুর ওয়েবসাইটে বানিয়ে এর মাধ্যমেও ইনকাম করতে দেখেছি অনেকজন কে। এই বিষয়টি সম্পুর্নভাবে হারাম কেননা আপনি এখানে প্রথমত পাইরেসি করা জিনিসপত্র ব্যাবহার করছেন এবং দ্বিতীয়ত এখানে হারাম জিনিস প্রমোট হচ্ছে। মুভি, গান বাজনা এইসব কিছু ইসলামে হারাম।
টিউশন
টিউশন করিয়ে অনেক স্টুডেন্ট উপার্জন করে থাকে। বিষয়টি দেখতে সুন্দর ও হালাল মনে হলেও এটি হারাম হতে বেশিক্ষণ লাগে না। টিউশন এটি একটি বিজনেস এর মত। আপনি শ্রম দিয়ে ইনকাম করছেন এখানে তাই ব্যাবসার ক্ষেত্রে যেসকল বিষয় হারাম এখানেও তা প্রযোজ্য। আপনি যদি মিথ্যা পরিচয় দেন।
যেমন: ভুল ভার্সিটির স্টুডেন্ট বলেন অথবা ১ম সেমিস্টার এর স্টুডেন্ট হয়ে অন্য সেমিস্টার এর স্টুডেন্ট বলেন। যেকোন ধরনের মিথ্যা আশ্রয় নিয়ে উপার্জন করলে সেটি আপনার জন্য হয়ে উঠতে পারে হারাম। তাছাড়া আপনার কনট্র্যাক্ট যদি থাকে ২ ঘণ্টা করে ৪/সপ্তাহ পড়াবেন এবং আপনি ফাঁকিবাজি করে এর কম পড়ান সেক্ষেত্রেও আপনার হালাল উপার্জন টি হারাম হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায় আমরা আমাদের শ্রম দিয়ে, কষ্ট করে উপার্জন করি। কিন্তু অল্প একটু ভুলের কারণে আমাদের সকল কষ্টের হালাল উপার্জন হারাম হয়ে যেতে পারে। তাই চোখ,কান খোলা রেখে, haram-halal এর জ্ঞান অর্জন করে উপার্জন করতে আহ্বান জানাই আপনাদের।
কোনো ভুল ত্রুটি ধরা পড়লে নির্দ্বিধায় কমেন্ট করুন, আমার কোনো ভুল হলে সেটি ঠিক করতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।
The post মাত্র কিছু ভুলের কারণে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আপনার উপার্জিত অর্থ হয়ে যেতে পারে সম্পূর্ন হারাম appeared first on Trickbd.com.
from Trickbd.com https://ift.tt/2OEy9Ao
via IFTTT