মশাবাহিত ৩ রোগের প্রাদুর্ভাব ও প্রতিরোধে করণীয়

আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

বর্ষাকাল এলেই মশার উপদ্রব বেড়ে যায়, আর এর সাথে সাথে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তিনটি প্রধান মশাবাহিত রোগ হল ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া। এই রোগগুলো থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করতে সচেতনতা এবং সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ম্যালেরিয়া

ম্যালেরিয়া একটি মারাত্মক রোগ যা প্লাজমোডিয়াম পরজীবীর কারণে হয়। এই পরজীবী সংক্রমিত স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। ম্যালেরিয়া সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে যেখানে মশার প্রজনন বেশি হয়।

ম্যালেরিয়ার লক্ষণ

ম্যালেরিয়ার প্রধান লক্ষণগুলো হল:

  • জ্বর: ম্যালেরিয়ার প্রধান লক্ষণ হল হঠাৎ করে জ্বর আসা। জ্বর সাধারণত প্রচণ্ড এবং পর্যায়ক্রমে আসে।

  • মাথাব্যথা: মাথাব্যথা হতে পারে এবং এটি সাধারণত প্রচণ্ড হয়।

  • ঠান্ডা লাগা এবং কাপুনি: ম্যালেরিয়ার সংক্রমণে ঠান্ডা লাগা এবং কাপুনি হতে পারে।

  • ঘামানো: জ্বর কমে যাওয়ার পর প্রচুর ঘাম হতে পারে।

  • শরীর ব্যথা: শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে পেশিতে।

  • বমি বমি ভাব এবং বমি: অনেকেরই বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে।

ম্যালেরিয়ার ধরণ

ম্যালেরিয়ার বিভিন্ন ধরন রয়েছে, তবে প্রধান চারটি হল:

  1. প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম: এটি সবচেয়ে মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী হতে পারে।

  2. প্লাজমোডিয়াম ভিভ্যাক্স: এটি কম গুরুতর কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

  3. প্লাজমোডিয়াম ওভালে: এটি অপেক্ষাকৃত বিরল।

  4. প্লাজমোডিয়াম ম্যালেরিয়া: এটি সাধারণত কম গুরুতর।

ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধ

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের কিছু উপায় হল:

  • মশারি ব্যবহার: রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন।

  • মশা তাড়ানোর ক্রিম ও লোশন: মশা তাড়ানোর ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন।

  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার রাখুন এবং পানি জমে থাকতে দেবেন না।

  • মশার নেট: জানালা এবং ভেন্টিলেটরে মশার নেট ব্যবহার করুন।

ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা

ম্যালেরিয়ার জন্য বিভিন্ন ওষুধ পাওয়া যায়। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করলে ম্যালেরিয়া জীবনঘাতী হতে পারে। সাধারণত চিকিৎসকরা রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে রোগী ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত কি না এবং তারপর সঠিক ওষুধ প্রদান করেন। প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার জন্য বিশেষ ওষুধ প্রয়োজন হয় এবং এটি তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করা জরুরি। ম্যালেরিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন। সতর্ক থাকুন, ম্যালেরিয়া থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করুন।

ডেঙ্গু

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা স্ত্রী এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগটি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে মারাত্মক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ‘ব্যাকবোন ফিভার’ নামে পরিচিত, কারণ এতে পেশি এবং হাড়ের প্রচণ্ড ব্যথা হয়।

ডেঙ্গুর লক্ষণ

ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণগুলো হল:

  • উচ্চ জ্বর: হঠাৎ করে ১০৪°F (৪০°C) বা তারও বেশি তাপমাত্রায় জ্বর আসে।

  • পেশি ও হাড়ের ব্যথা: পেশি এবং হাড়ের তীব্র ব্যথা হয়, যা অত্যন্ত কষ্টকর হতে পারে।

  • মাথাব্যথা: বিশেষ করে কপালের পেছনে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয়।

  • ফুসকুড়ি: ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে, যা সাধারণত জ্বর শুরু হওয়ার ২ থেকে ৫ দিন পর দেখা দেয়।

  • বমি বমি ভাব এবং বমি: বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে।

  • চোখের পেছনে ব্যথা: চোখের পেছনে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

ডেঙ্গুর ক্যাটাগরি

ডেঙ্গু তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়:

  1. ক্যাটাগরি এ: সাধারণ ডেঙ্গু, যা বাড়িতে বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যায়।

  2. ক্যাটাগরি বি: ডেঙ্গুর এই ধরনে হাসপাতালের চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। জ্বরের পাশাপাশি পেটব্যথা, বমি, এবং অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে।

  3. ক্যাটাগরি সি: সবচেয়ে গুরুতর ডেঙ্গু, যা লিভার, কিডনি, এবং মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। এটি নিবিড় পরিচর্যা এবং হাসপাতালের চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

ডেঙ্গুর প্রতিরোধ

ডেঙ্গু প্রতিরোধের কিছু উপায় হল:

  • মশারি ব্যবহার: রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন।

  • মশা তাড়ানোর ক্রিম ও লোশন ব্যবহার করুন: মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য মশা তাড়ানোর ক্রিম ও লোশন ব্যবহার করুন।

  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন: বাড়ির আশেপাশে পানি জমে থাকতে দেবেন না। মশার প্রজননের জন্য পরিষ্কার পানি প্রয়োজন হয়, তাই জমা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

  • মশার নেট ব্যবহার করুন: জানালা এবং ভেন্টিলেটরে মশার নেট ব্যবহার করুন।

ডেঙ্গুর চিকিৎসা

ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, কারণ এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। তবে ডেঙ্গুর লক্ষণগুলোর চিকিৎসা করা যায়:

  • শরীরের ব্যথা এবং জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল ব্যবহার করুন: প্যারাসিটামল ডেঙ্গুর জ্বর এবং ব্যথা উপশমে সাহায্য করে।

  • অ্যাডভিল বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করবেন না: এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

  • পানি ও তরল খাবার বেশি করে খান: ডেঙ্গু হলে শরীরের পানি শূন্যতা দেখা দেয়, তাই প্রচুর পানি এবং তরল খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন। সতর্ক থাকুন, ডেঙ্গু থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করুন।

চিকুনগুনিয়া

চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস অ্যালবোপিকটাস এবং এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে সাধারণ। চিকুনগুনিয়া শব্দটি এসেছে তানজানিয়ার কিমাকোন্দে ভাষা থেকে, যার অর্থ “যা বাঁকিয়ে দেয়”। এটি রোগীদের প্রচণ্ড জয়েন্ট ব্যথার কারণে হয়, যা তাদের শরীরকে বাঁকা করে দেয়।

চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ

চিকুনগুনিয়ার প্রধান লক্ষণগুলো হল:

  • উচ্চ জ্বর: হঠাৎ করে জ্বর আসে, যা ১০২°F (৩৯°C) বা তারও বেশি হতে পারে।

  • জয়েন্টের ফোলা এবং ব্যথা: জয়েন্টে ফোলা এবং তীব্র ব্যথা হয়, যা কয়েকদিন থেকে কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

  • পেশির ব্যথা: পেশিতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

  • মাথাব্যথা: প্রচণ্ড মাথাব্যথা হতে পারে।

  • ফুসকুড়ি: ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।

  • ক্লান্তি: শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গুর মধ্যে পার্থক্য

চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গু উভয়ই এডিস মশার কামড়ে ছড়ায় এবং তাদের লক্ষণগুলো প্রায় একইরকম। তবে, চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে জয়েন্টের ব্যথা বেশি তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে, রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেশি থাকে, যা চিকুনগুনিয়াতে কম দেখা যায়।

চিকুনগুনিয়ার প্রতিরোধ

চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের কিছু উপায় হল:

  • মশারি এবং মশার নেট ব্যবহার করুন: রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন এবং জানালা ও ভেন্টিলেটরে মশার নেট ব্যবহার করুন।

  • মশা তাড়ানোর ক্রিম ও লোশন ব্যবহার করুন: মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য মশা তাড়ানোর ক্রিম, লোশন বা রোল-অন ব্যবহার করুন।

  • পরিষ্কার পরিবেশ বজায় রাখুন: বাড়ির আশেপাশে পানি জমে থাকতে দেবেন না এবং ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।

  • মশা তাড়ানোর উপকরণ ব্যবহার করুন: মশা তাড়ানোর জন্য কয়েল, অ্যারোসল এবং লিকুইড ভ্যাপোরাইজার ব্যবহার করুন।

চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা

চিকুনগুনিয়ার নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই, তবে লক্ষণগুলোর চিকিৎসা করা যায়:

  • প্যারাসিটামল ব্যবহার করুন: জ্বর এবং ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ব্যবহার করুন।

  • অ্যাডভিল বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করবেন না: এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

  • পানি ও তরল খাবার বেশি করে খান: শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে প্রচুর পানি এবং তরল খাবার খান।

  • বিশ্রাম নিন: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন যাতে শরীর দ্রুত সেরে উঠতে পারে।

চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন। সতর্ক থাকুন, চিকুনগুনিয়া থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করুন।

উপসংহার

মশাবাহিত রোগ যেমন ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি স্বরূপ। বর্ষাকালে এই রোগগুলোর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়, তাই এসময় আমাদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার, মশা তাড়ানোর ক্রিম এবং লোশন ব্যবহার, বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমরা সহজেই এই রোগগুলোর প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে পারি। মশাবাহিত ৩ রোগে সতর্ক থাকুন এবং সুস্থ জীবন যাপন করুন। আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্বাস্থ্যের জন্য এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন এবং নিরাপদ থাকুন।

আপনার ওয়েবসাইটের জন্য আর্টিকেল প্রয়োজন হলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ফেসবুকে আমি

The post মশাবাহিত ৩ রোগের প্রাদুর্ভাব ও প্রতিরোধে করণীয় appeared first on Trickbd.com.



from Trickbd.com https://ift.tt/fVMnakC
via IFTTT

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট