প্রিয় পাঠক, কেমন আছেন? আজকে আমরা পুরাতন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। যারা হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করতে চান তারাও এই লেখাটি পড়ে সেটি করতে পারবেন। তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
দেশের জনগণের জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করার পর থেকে এ পর্যন্ত সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে।
প্রথম অবস্থায় জন্ম নিবন্ধন সনদ করতে কোন রকম ঝামেলা পোহাতে হতো না। ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেকে একটা ফর্ম নিয়ে এসে সেটা হাতে পূরণ করে জমা দিলেই সেটা জন্ম নিবন্ধন হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
কিন্তু পরবর্তীতে জন্ম নিবন্ধন পদ্ধতিটি অনলাইন করা হয় যার ফলে এখন বেশ জটিল হয়ে গেছে প্রক্রিয়াটি। জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম অনেকেরই জানা নেই। আজকের আলোচনায় সেই বিষয়টি আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা আছে কিনা চেক করে নিন
সর্বপ্রথম অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন চেক করে দেখে নিন আপনার জন্ম নিবন্ধনটি অনলাইন করা আছে কিনা। যদি দেখেন সেটি অনলাইনে নেই তাহলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
পুরাতন জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে করার নিয়ম
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। আপনাকে বিভিন্ন সময়ে নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভায় বারবার ছোটাছুটি করতে হবে। কিন্তু আপনি চাইলে সেই ঝামেলা কমিয়ে নিয়ে আসতে পারেন। ঘরে বসেই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার আবেদন করতে পারেন।
তবে এই প্রক্রিয়াটি একটু জটিল। আপনার হাতের কাছে আপনার প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র থাকতে হবে। সেই সঙ্গে একটু লম্বা সময় হাতে নিয়ে আবেদন ফর্মটি পূরণ করতে বসতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে পুরাতন জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে করবেন।
প্রথম ধাপঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার জন্য প্রথমে আপনাকে সরকার নির্ধারিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটটি আপনি গুগলে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন অথবা আমাদের এখান থেকে নিচের লিংকটিতে ক্লিক করে প্রবেশ করতে পারেন।
https://bdris.gov.bd/br/application
দ্বিতীয় ধাপঃ স্থান নির্ধারণ
ওয়েব সাইটটিতে প্রবেশ করার পর আপনি এমন একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন। নিচের দিকে তিনটি অপশন দেখতে পাচ্ছেন। জন্মস্থান, স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা। এখান থেকে যে কোন একটি সিলেক্ট করা আবশ্যক।
এই বিষয়টি হচ্ছে আপনি আপনার জন্ম সনদ কোথা থেকে সংগ্রহ করতে চাচ্ছেন তা আপনার কাছে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। একজন মানুষের মূলত তিন ধরনের ঠিকানা থাকে। একটি হচ্ছে জন্মস্থান, অন্য দুটি হল স্থায়ী এবং বর্তমান ঠিকানা।
আপনি যদি জন্মস্থান থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে চান তাহলে ‘জন্মস্থান‘ সিলেক্ট করবেন। অথবা অন্য যে কোন একটি অপশন সিলেক্ট করতে হবে। এর পরে “পরবর্তী” অপশনটিতে ক্লিক করবেন।
তৃতীয় ধাপঃ ফর্ম পূরণ করতে হবে
পরবর্তী অপশনটিতে ক্লিক করার পর আপনি আরও একটি ফরম পাবেন।
নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন
সেখানে সম্পূর্ণ সঠিক তথ্য দিয়ে আপনাকে আবেদন ফর্মটি পূরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আপনি যদি কোনো তথ্য ভুল প্রদান করেন সেই তথ্য সঠিক করার আর কোন উপায় নেই। সেক্ষেত্রে আপনার জন্ম সনদ বাতিল হয়ে যাবে সুতরাং তথ্য সঠিক প্রদান করা খুবই জরুরি।
সেই সঙ্গে আপনি যে তথ্যটি প্রদান করছেন সেটি যাচাই করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হবে সুতরাং বুঝতেই পারছেন আপনার তথ্য পরিপূর্ণভাবে সঠিক হতে হবে এবং গোছানো হতে হবে।
আবেদন ফরম পূরণ করার সময় একটি বিষয় মাথায় রাখবেন যে অপশন গুলো তে লাল রংয়ের তারকা চিহ্ন রয়েছে সেগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। আর যেগুলোর পাশে লাল রঙের তারকা চিহ্ন নেই সেগুলো পূরণ না করলেও চলবে।
ফরম পূরণের এক পর্যায়ে এসে আপনি যখন আপনার জন্ম তারিখ সিলেক্ট করবেন তখন আপনার জন্ম তারিখ সঠিক কিনা এটা যাচাই করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে কিনা সেটা আপনার কাছে জানতে চাইতে পারে।
সেক্ষেত্রে ছবির মত আপনার কাছে দুটি অপশন থাকবে। যদি আপনার কাছে সেই কাগজপত্রগুলো থাকে তাহলে সবুজ বাটনটিতে (আমার কাছে ডকুমেন্টগুলি আছে) ক্লিক করবেন অন্যথায় লাল বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে। ফরমটি পূরণ করা হয়ে গেলে “পরবর্তী” অপশনটিতে ক্লিক করবেন।
বিঃদ্রঃ জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর থাকলে দিয়ে দিবেন। না থাকলে দেওয়ার দরকার নেই।
চতুর্থ ধাপঃ পিতা এবং মাতার তথ্য দিন
আগের ফর্মটি পূরণ করার পর আপনার কাছে নতুন আরো একটি ফর্ম আসবে। এখানে আপনার পিতা এবং মাতার তথ্য চাওয়া হবে। সেক্ষেত্রে তাদের জন্ম নিবন্ধন নাম্বার, তাদের নাম এবং তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর চাওয়া হবে।
সরকারি এই ওয়েবসাইট অনুযায়ী এখানে আপনি যেকোনো একজনের তথ্য প্রদান করলেই হবে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভা থেকে বলা হয় দুজনার তথ্য প্রদান করতে। যেহেতু আমরা ইউনিয়ন এবং পৌরসভার কাছে থেকেই আমাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করবো সে ক্ষেত্রে দুজনের তথ্য প্রদান করাই ভালো। এখানেও খুব সাবধানতার সঙ্গে বাবা-মায়ের তথ্যগুলো দিয়ে পূরণ করবেন। তারপর “পরবর্তী” অপশনটিতে ক্লিক করবেন।
পঞ্চম ধাপঃ স্থায়ী ঠিকানা সিলেক্ট করুন
এরপরে আপনাকে আবারও জিজ্ঞাসা করা হবে আপনার স্থায়ী ঠিকানা কোনটি। এজন্য অবশ্য এই ওয়েবসাইটটিতে একটি পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। এখানে আপনাকে প্রশ্ন করা হবে নিচের কোন ঠিকানায় আপনি আপনার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে সিলেক্ট করতে চান কিনা? সেখানে আপনি “কোনোটিই নয়” সিলেক্ট করবেন।
এর পরে আপনাকে নিচে অপশন দেওয়া হবে জন্মস্থান এর ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা একই। যদি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় তাহলে সেটা টিকমার্ক দেবেন। এরপর একই প্রশ্ন আবারও জিজ্ঞাসা করা হবে। একই প্রক্রিয়া আবারো রিপিট করবেন। এভাবেই মূলত আপনার স্থায়ী ঠিকানা সিলেক্টেড হয়।
তবে যদি কোনো ক্ষেত্রে স্থায়ী ঠিকানা সেলেক্টেড না হয় তাহলে নিজে লিখে স্থায়ী ঠিকানা প্রদান করতে হবে। স্থায়ী ঠিকানা সিলেক্ট হওয়ার পর আপনাকে আবারও “পরবর্তী” অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে।
ষষ্ঠ ধাপঃ আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর
এরপরে আপনাকে আরো একটি স্টেপ পার করতে হবে। সেখানে আপনাকে জিজ্ঞেস করা হবে যে ব্যক্তির জন্য আপনি এপ্লাই করলেন সেটা কি আপনি নিজে বা অন্য কারো জন্য। যদি আপনার নিজের জন্য হয় তাহলে আপনার নাম আসবে এবং সেইসঙ্গে আপনার ফোন নাম্বার এবং ইমেইল এড্রেস প্রদান করতে হবে।
এতে করে আপনার জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কিত সকল তথ্য আপনাকে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এসএমএস বা মেইল করে পাঠানো হবে। আর যদি এটি অন্য কারো জন্য হয় তাহলে সেই ব্যক্তির ফোন নাম্বার এবং জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর সহ অন্যান্য তথ্য প্রদান করতে হবে।
সপ্তম ধাপঃ জন্মস্থান ও জন্মতারিখের তথ্য প্রদানকারীর তথ্য
এ পর্যায়ে আপনাকে জন্মস্থান ও জন্মতারিখের তথ্য প্রদানকারীর তথ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার মেম্বার বা ওয়ার্ড কমিশনারের জন্ম তারিখ নম্বর, এনআইডি নম্বর ও নাম দিতে পারেন।
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আপনার চেয়ারম্যান, মেম্বার বা ওয়ার্ড কমিশনারের জন্ম তারিখ নম্বর, এনআইডি নম্বর ও নাম দিতে হবে।
সপ্তম ধাপঃ সংযোজন
নিচের দিকে ‘+সংযোজন‘ বাটনে ক্লিক করে আবেদনকারীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট, MMBS ডাক্তার দ্বারা প্রত্যয়ন করা মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। আর ছোটদের ক্ষেত্রে টিকা কার্ডও দেওয়া যাবে।
এছাড়াও একই বাটনে ক্লিক করে আবেদনকারীর বাবা ও মায়ের জন্ম নিবন্ধনের স্ক্যান কপি বা ছবি জমা দিতে হবে। সকল তথ্য প্রদান শেষে আপনাকে ‘পরবর্তী‘ অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে।
অষ্টম ধাপঃ তথ্য যাচাই করুন
জন্ম নিবন্ধন আবেদনের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি আমরা। এ পর্যায়ে আপনাকে সকল তথ্য পুনরায় দেখানো হবে। আপনি সকল তথ্য নিজে থেকে পড়বেন। যদি কোনো রকম ভুল বা অসঙ্গতি থাকে সেটাকে ঠিক করতে হবে। আর যদি কোন ভুল না থাকে তাহলে আপনাকে “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
শেষ ধাপঃ আবেদন পত্র প্রিন্ট করুন
“সাবমিট” বাটনে ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার আবেদনটি গ্রহণ করা হবে এবং আপনাকে আবেদন পত্রের নম্বর প্রদান করতে হবে।
আপনাকে সবসময় এই নম্বরটি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে কারণ এটির মাধ্যমে আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধনের পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন। সেই সঙ্গে আপনি অবশ্যই “আবেদন পত্র প্রিন্ট করুন” অপশনটিতে ক্লিক করবেন।
এতে করে আপনার আবেদন পত্র প্রিন্ট করার মত একটি কপি তারা আপনাকে দেবে। যা প্রিন্ট করে আপনাকে পরবর্তী 15 দিনের মধ্যেই ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভায় প্রদান করতে হবে।
এটি শুধুমাত্র একটি আবেদন প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন পাওয়ার একধাপ এগিয়ে গেলেন। পরবর্তী ধাপে আপনাকে অবশ্যই আপনার ইউনিয়ন পরিষদে অথবা পৌরসভায় যোগাযোগ করতে হবে। তারা বাকি কাজ করে দেবে অথবা পরবর্তীতে আপনাকে আর কি কাজ করতে হবে সেটা বলে দেবে।
আশা করি কিভাবে আবেদন করতে হয় সেই প্রক্রিয়াটি বুঝে গেছেন। এভাবে আবেদন করার মাধ্যমে আপনি আপনার হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন অথবা পুরাতন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করতে পারবেন।
পোস্টটি টি এতক্ষণ ধৈর্য ধারণ করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। কোনো কিছু ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। যেকোনো সমস্যা হলে কমেন্ট করে জানাবেন।
The post ২০২৩ সালে পুরাতন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম appeared first on Trickbd.com.
from Trickbd.com https://ift.tt/euNpYBX
via IFTTT