ভেক্টর গ্রাফিক্স
আমরা যখন ক্যামেরাতে একটা ছবি তুলি, ছবিটি অনেকগুলো বর্গাকার ব্লক বা পিক্সেলের সমন্বয়ে তৈরি হয়। এধরণের গ্রাফিক্সকে বলা হয় বিটম্যাপ গ্রাফিক্স অথবা রাস্টার গ্রাফিক্স। যখন একটা রাস্টার গ্রাফিক্স যথেষ্ট জুম করা হয়, তখন পিক্সেলগুলো আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়।
ডিজিটাল গ্রাফিক্সের আরেকটি ধরণ আছে, ভেক্টর গ্রাফিক্স। ভেক্টর গ্রাফিক্সকে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি- যেমন পয়েন্ট, লাইন, কার্ভ কিংবা বহুভুজের সাহায্যে ডিফাইন করা হয়। একারণে এধরণের গ্রাফিক্সগুলোর বেশ কিছু এডভান্টেজ আছে। এক তো হলো যেরকম প্রয়োজন জুম বা রিসাইজ করা যায়, তার সাথে এডিটিংয়ে ফ্লেক্সিবিলিটি থাকে এবং প্রিন্টিংয়ের জন্যও এধরণের গ্রাফিক্স বেটার।
ইঙ্কস্কেপ
দিনশেষে, একটা সুন্দর ডিজাইন নির্ভর করে ডিজাইনারের দক্ষতা ও সৃজনশীলতার ওপর। কিন্তু ডিজাইনার তার সৃজনশীলতাকে ইফিশিয়েন্টভাবে ক্যানভাসে রূপ দেয়ার জন্য একটা ভালো সফটওয়্যারের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আর, আরো কিছু সফটওয়্যারের পাশাপাশি, ভেক্টর গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে ইঙ্কস্কেপ একটা ভালোমানের সফটওয়্যার।
তবে ইঙ্কস্কেপকে যে বিষয়টি আলাদা করবে, তা হলো ওপেন সোর্স ও কমিউনিটিভিত্তিক হিসেবে এটা সবার জন্য উন্মুক্ত। শখের ডিজাইনাররা যেমন ইঙ্কস্কেপ সহজেই হাতে নিতে পারেন, তেমনি প্রোফেশনাল পর্যায়ে অনেকেই ইঙ্কস্কেপ ব্যবহার করে থাকেন। এটা ব্যবহার শুরু করতে কোন বাধা পার করতে হবে না। আপনার কম্পিউটার অনেক পাওয়ারফুল হওয়ার প্রয়োজন নেই, শক্তিশালী ইন্টারনেট কানেকশন প্রয়োজন নেই, নির্দিষ্ট কোন অপারেটিং সিস্টেমে থাকা প্রয়োজন নেই, কোন ক্রয় বা সাবস্ক্রিপশনেরও প্রয়োজন নেই। এবং ইঙ্কস্কেপ ব্যবহার শুরু করতে দীর্ঘ কোন লার্নিং স্টেজও পার করতে হবে না।
ইঙ্কস্কেপ সম্পূর্ণ ফ্রি ও ওপেন সোর্স কমিউনিটি-ভিত্তিক একটি প্রোগ্রাম। ফ্রি বলতে সম্পূর্ণ ফ্রি- কোন ট্রায়াল বা ডেমো ভার্সন না, কোন প্রিমিয়াম ভার্সন বা সাবস্ক্রিপশন নেই, কোন বিজ্ঞাপন নেই- পুরোপুরি ফ্রি সফটওয়্যার, GPL লাইসেন্সের অধীনে প্রকাশিত। হ্যা, আপনি চাইলে ডোনেট অথবা দক্ষতা থাকতে কন্ট্রিবিউট করতে পারবেন- তবে সেটা সম্পূর্ণভাবে ঐচ্ছিক।
ইঙ্কস্কেপ ক্রস-প্লাটফর্ম- লিনাক্স, ম্যাক ও উইন্ডোজ থেকে ব্যবহার করতে পারবেন। এটা নিজে খুব লাইটওয়েট, ইন্সটলারের সাইজ ১০০ মেগাবাইটের আশেপাশে এবং সুনির্দিষ্ট কোন মিনিমাম সিস্টেম রিকুয়ারমেন্ট নেই। বেসিকালি পটেটো পিসি থেকেও চালাতে পারবেন, ২ জিবি র্যাম ও তৃতীয় জেনারেশনের i3 প্রসেসরে আমি ইঙ্কস্কেপ চালিয়েছি। তবে হ্যা, আপনার ডিজাইন যত কমপ্লিকেটেড হবে, এটা তত বেশি হার্ডওয়্যার রিসোর্স নিবে, সেক্ষেত্রে আপনার ভালো কনফিগারেশনের ডিভাইস প্রয়োজন হবে।
ইলাস্ট্রেটরের সাথে ইঙ্কস্কেপের ক্রস-কম্প্যাটিবিলিটি মোটামুটি। ন্যাটিভ ফাইল ফর্ম্যাট ও কালার-স্পেস ভিন্ন। যাইহোক ইলাস্ট্রেটরের ফাইল ইঙ্কস্কেপে এবং ইঙ্কস্কেপের ফাইল ইলাস্ট্রেটরে ওপেন ও এডিট করা সম্ভব, তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকার নিশ্চয়তা নেই।
ইন্টারফেস
ইঙ্কস্কেপের একটি দিক হলো এটা এক দিকে যেমন এডভান্সড, অন্যদিকে ব্যবহার করা সহজ। ইঙ্কস্কেপের ইউজার ইন্টারফেস সুন্দর, গোছানো এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি। ইঙ্কস্কেপ শিখতে খুব কঠিন কোন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না।
ইঙ্কস্কেপ ডার্ক ও লাইট থিম, কনট্রাস্ট এডজাস্টমেন্ট এবং কয়েকটি আইকন থিম ভ্যারিয়েন্ট, ফন্ট স্কেলিংয়ের মত থিমিং সুবিধা অফার করে। প্রয়োজন মনে না হলে কোন সেকশন হাইড রাখা যায়।
টুলস ও ফিচারস
এডোবি ইলাস্ট্রেটরে ছোট ছোট কাজের জন্য আলাদা আলাদা টুল প্রদান করার প্রবণতা দেখা যায়। অন্যদিকে ইঙ্কস্কেপে প্রতিটি টুলকে বিভিন্ন কাজ করার জন্য পাওয়ারফুলভাবে ডিজাইন করা। যেমন সিলেক্ট, স্কেল, ফ্লিপ, মুভ, রোটেট, শিয়ার প্রভৃতি সিলেক্টর টুলের মাধ্যমে করা যায়। নোড বা অ্যাঙ্কর পয়েন্ট এডিটিংয়ের সবকিছু নোড টুলসের মধ্যে রয়েছে।
পাথ এডিটিংয়ের জন্য পেন (কার্ভ/লাইন) ও পেনসিল (ফ্রি-হ্যান্ড) দুটো টুল আছে। দুটো টুলেই কয়েকটি মোড ও অপশনস আছে। কয়েকটি শেপ টুল আছে- রেকটাঙ্গল, সার্কেল, স্টার/পলিগন, স্পাইরাল। এরপর টেক্সট টুল, গ্রাডিয়েন্ট ও মেশ, এবং আরো বিভিন্ন কমবেশি প্রয়োজনীয় টুলস আছে।
ইঙ্কস্কেপে এডভান্সড পাথ অপারেশনস রয়েছে। লেটেস্ট ভার্সনে শেপ বিল্ডার টুলও যুক্ত হয়েছে, যেটা ইলাস্ট্রেটরের শেপ বিল্ডার টুলের মতই কাজ করে। একাধিক পাথ বা শেপের সমন্বয়ে কমপ্লেক্স শেপ তৈরি করতে এই ফিচারগুলো সাহায্য করবে। পাথ ইফেক্টস প্যানেলের মধ্যে বিভিন্ন লাইভ পাথ ইফেক্টস এভেইলেবল রয়েছে ডিজাইনকে লেভেল আপ করার জন্য।
ইঙ্কস্কেপে এডভান্সড বিটম্যাপ ট্রেসিং ফিচার আছে, যার মাধ্যমে রাস্টার গ্রাফিক্স থেকে ভেক্টর গ্রাফিক্স জেনারেট করতে পারবেন।
বিভিন্ন বিল্টইন ফিল্টার ও তার সাথে এক্সটেনশন সমর্থন রয়েছে। বিভিন্ন লেয়ার নিয়ে কাজ করার সুবিধা আছে। গাইড, রেকটাঙ্গুলার ও আইসোমেট্রিক গ্রিডস ব্যবহার করা যায়। মাল্টিপেজ ডকুমেন্ট সমর্থন করে।
তো হ্যা, সিম্পল ইন্টারফেস হলেও ফিচারের দিক থেকে ইঙ্কস্কেপ শখের ইউজার থেকে শুরু করে প্রোফেশনাল পর্যায়ে ব্যবহার করার মত একটি পূর্ণাঙ্গ ভেক্টর ডিজাইন অ্যাপ্লিকেশন।
খারাপ দিক
সাম্প্রতিক সময়ে ইঙ্কস্কেপের ডেভেলোপমেন্ট খুবই নিয়মিত হচ্ছে এবং প্রতিটা রিলিজের সাথে এখানে নতুন ফিচার ও ফিক্স আসছে এবং এটা আরো পলিশড ও স্ট্যাবল একটি সফটওয়্যার হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ২০২০ সালে 1.0 ভার্সন রিলিজের আগে ও পরে একটা স্পষ্ট ব্যবধান দেখা যাবে এখানে। পরবর্তী ভার্সনগুলোর জন্য অসাধারণ কিছু কাজ চলছে। তবে ঠিক এই মুহুর্তে ইঙ্কস্কেপের কন্সিডার করার মত বেশ কিছু সমস্যা আছে।
স্ট্যাবিলিটির দিক থেকে ইঙ্কস্কেপে একটা ইস্যু আছে। কিছু বাগের সম্মুখীন হতে পারেন। আরেকটা বড় সমস্যা হলো এটা ক্র্যাশ-প্রবণ। যেকোন মুহুর্তে না বলে-কয়ে ক্র্যাশ করতে পারে। অটোসেভ ফিচার কিছু ক্ষেত্রে রক্ষা করবে, কিন্তু এটা একটা বিশাল রকম ফ্রাস্ট্রেশন হতে পারে বলাই বাহুল্য।
প্রিন্টিংয়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রিন্টার CMYK ব্যবহার করে। অন্যদিকে ইঙ্কস্কেপ sRGB কালার স্পেসে কাজ করে, এখন পর্যন্ত CMYK কালার স্পেস সমর্থন নেই ইঙ্কস্কেপে। এজন্য কালার প্রিন্টিংয়ে ডিসপ্লের সাথে পুরোপুরি একুরেট থাকবে না, সামগ্রিকভাবে একটু অনুজ্জল হবে বলা যায়। যাইহোক, আমি ইঙ্কস্কেপে করা ডিজাইন টি-শার্ট, স্টিকার ও ব্যানার প্রিন্ট করেছি। কালারের ব্যাপারটা আমার কখনো সমস্যার পর্যায়ে মনে হয়নি। এবং পরবর্তী ভার্সন, 1.4-থেকে CMYK সাপোর্ট যুক্ত করার জন্য কাজ চলছে।
তবে সমস্যা মনে হয়েছে অন্য জায়গায়। দোকানগুলোতে সাধারণত ইলাস্ট্রেটর অথবা কোন পিডিএফ রিডার থেকে প্রিন্ট দেয়া হয়। আর এমনিতেও ইঙ্কস্কেপের ডিজাইন প্রিন্ট করতে পিডিএফ বা অন্য কোন ফরমেটে এক্সপোর্ট করে নিতে হয়, সরাসরি প্রিন্ট করা যায় না। jpg বা png ফরমেট প্রিন্টারের সাথে মিলিয়ে dpi যথাযথ না হলে প্রিন্টিং ব্লারি আসতে পারে। এদিকে সেফ হলো pdf ফরমেট। pdf এক্সপোর্টে অনেক সময় এদিক-ওদিক হয়ে যায়। তখন ঠিক করার জন্য ওয়ার্কঅ্যারাউন্ড খুঁজতে হয়। আর প্রিন্টের আগেও সশরীরে উপস্থিত থেকে সবকিছু ঠিক আছে কিনা চেক করে নেয়া ছাড়া ভরসা পাওয়া যায় না।
ইলাস্ট্রেটরের সাথে কম্পারিজন
ইলাস্ট্রেটর ও ইঙ্কস্কেপ দুটোই আপনাকে ক্রিয়েটিভ ফ্রিডম দিবে প্রোফেশনাল গ্রেড অসাধারণ কিছু ভেক্টর গ্রাফিক্স তৈরি করার। ডিজাইন ক্যাপাবিলিটিতে কোনটিই আপনাকে রেস্ট্রিক্ট করবে না।
তবে প্রোফেশনাল পর্যায়ে কিছু জায়গায় এডোবি ইলাস্ট্রেটরকে রিপ্লেস করা কঠিন। যেমন ইন্ডাস্ট্রি কম্প্যাটিবিলিটি, থার্ড পার্টি ইন্টিগ্রেশনস, প্রোফেশনাল সাপোর্ট এবং এডোবি ক্রিয়েটিভ ক্লাউড ইকোসিস্টেম- এই দিকগুলোতে ইলাস্ট্রেটরকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী-ই বলা যায়। এছাড়া এখন Adobe Firefly AI একে আরেকটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। পাশাপাশি এক্সট্রা ফাংশনালিটি ও ফিচারের দিক থেকে ইলাস্ট্রেটর সিমপ্লি এগিয়ে থাকবে। থ্রিডি ক্যাপাবিলিটি, এনিমেশন, ডিজিটাল ড্রইং এই জায়গাগুলোতে ইঙ্কস্কেপের সক্ষমতা সীমিত।
ইঙ্কস্কেপের অনন্যতা হলো এর উন্মুক্ততা, ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস, কমিউনিটিভিত্তিক সাপোর্টে। ইলাস্ট্রেটরের সাথে আমার অভিজ্ঞতা যদিও খুব কম, তবে মনে হয়েছে নতুন কেউ ইলাস্ট্রেটরে এসে খুব সহজে হারিয়ে যেতে পারে, এবং মোটামুটি একটা লার্নিং স্টেজ ছাড়া ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করা মুশকিল। এই দিকে ইঙ্কস্কেপের কার্যপদ্ধতি আমার কাছে বেটার-ডিজাইনড মনে হয়েছে।
ডাউনলোড
The post ইঙ্কস্কেপ: ভেক্টর গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য সেরা একটি ফ্রি সফটওয়্যার (এডোবি ইলাস্ট্রেটরের বিকল্প) appeared first on Trickbd.com.
from Trickbd.com https://ift.tt/Uu7pXW0
via IFTTT